পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জানিতেন না। ঈসা খাঁর বিবাহ-প্ৰস্তাবে তিনি যদি আপত্তি উথাপন না করতেন, তাহা হইলে স্বর্ণময়ীর জীবন-পূর্ণিমা আজ এমন অমাবস্যায় পরিণত হইত না। তিনিই যে স্বর্ণময়ীর প্রণয়-পথে কণ্টক রোপণ করিয়াছেন, তাহা স্মরণ করিয়া লজিত এবং মর্মাহত হইলেন। এক্ষণে প্ৰাণপাত করিয়াও সে কণ্টক উদ্ধার করিতে পারিলে, তিনি সুখী হইতে পারেন! স্বর্ণের ভবিষ্যৎ কি হইবে? কিরূপে ইদিলপুরের শ্ৰীনাথ চৌধুরীর সহিত বিবাহ-সম্পর্ক ভঙ্গ করিয়া ঈসা খাঁর সহিত স্বর্ণময়ীর উদ্বাহ ক্রিয়া সম্পন্ন করবেন, তাহাঁই জহিরুল হকের একমাত্র চিন্তার বিষয় হইয়া উঠিল। স্বৰ্ণকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করিতে পারিলে শ্ৰীনাথ স্বৰ্ণ মুসলমান হইলেই বা তাহাকে কোথায় আশ্রয় দেওয়া যাইবে? কেদার রায়ের রোষানলে দন্বিভূত হইতে কে স্বীকার করিবে! জহিরুল হক স্বর্ণময়ী সম্বন্ধে অনেক চিন্তা করিলেন, কিন্তু মস্তিষ্ক-সিন্ধু আলোড়ন করিয়াও কিছু স্থির করিতে পারিলেন না। অবশেষে অধীর হইয়া তাহার ধর্মগুরু ধর্মাত্মা হজরত সুকী মহীউদ্দীন শাহের চরণে সমস্ত বৃত্তান্ত বিশদরূপে বিবৃত করিলেন। শাহ সাহেব ক্ষণকালের জন্য নেত্র নিমীলিত করিয়া ধ্যানস্থ হইলেন। তৎপর বলিলেন, “কয়েকদিন অপেক্ষা কর, কি করতে হবে জানতে পারবে ।” বিংশ পরিচ্ছেদ उप्न् আগ্রহায়ণ মাসের প্রথমাংশ বিগতপ্ৰায় । স্বর্ণময়ীর বিবাহের আর দশ দিন মাত্র অবশিষ্ট। শ্ৰীপুরের রাজবাটীতে বিবাহের জন্য বিশেষ সমারোহ ব্যাপার। স্বর্ণের উদ্বেগ ও অশান্তি চরমে উঠিয়াছে। তােহাৱা পরিণাম যে কি ভয়াবহ হইবে, ভাবিয়া তাহার হৃদয় কঁপিয়া উঠিতেছে। স্বর্ণের তপ্ত স্বর্ণের ন্যায় বর্ণ বিবৰ্ণ হইয়াছে। তাহার মুখ শুষ্ক, বদনমণ্ডল মলিন!। জহিরুল হকও বিশেষ চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। তবে তাহার পীর মহাজ্ঞানী মহীউদ্দীন সাহেবের বাক্যের উপরে নির্ভর করিয়াই কথঞ্চিৎ আশ্বন্ত রহিয়াছেন। ইতিমধ্যে আগ্রহায়ণ মাসের ১৫ই তারিখ বৃহস্পতিবার প্রাতে সুকী মহীউদ্দীন সাহেব জহিরুল হককে ডাকিয়া বলিলেন, “এখনি তুমি রায়-নন্দিনীকে লয়ে বিজয়নগরে যাত্রা কর। তথায় গেলেই তোমাদের অভীষ্ট সিদ্ধ হবে।” 》の○