পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমিনা বানুর উৎসাহ এবং যুদ্ধপ্ৰিয়তা সম্প্রদর্শন করিয়া সকলেই যুদ্ধের জন্য আবার মাতিয়া উঠিলেন। সুতরাং দুর্গবাসী সকলেই প্ৰাণপণ যত্নে দুর্গ-প্রাচীরের ভগ্নস্থানগুলি রাতারাতি মেরামত করিয়া প্ৰতাতে যুদ্ধের জন্য প্ৰস্তুত হইলেন। মোতােমদ খান এবং কুমারী আমিনা বানু অশ্বারোহণে দুর্গের সর্বত্র পরিভ্রমণ করিয়া সকলকে উৎসাহিত এবং উদ্বোধিত করিতে লাগিলেন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই কুমারী। আমিনা বানু বৰ্মমণ্ডিত অবস্থায় অস্ত্ৰ-শস্ত্ৰে সজ্জিত হইয়া স্বয়ং সেনাপতির পদ গ্রহণপূর্বক ভীম বিক্রম এবং আটল সঙ্কল্পে গৈরিক প্লাবনের ন্যায় শিবাজীর বাহিনীর উপরে যাইয়া। আপতিত হইলেন। ভীষণ প্ৰতাপে শিবাজীর বৃহ বিদীর্ণ হইয়া গেল। আমিনা বানু অনেক দূর পর্যন্ত মাওয়ালী ও মারাঠা সৈন্যের পশ্চাদ্ধাবন করিয়া দুর্গে ফিরিয়া আসিলেন। শিবাজীর সৈন্যের প্রচুর রসদ-পত্ৰ তোপ-বন্দুক ও গোলাগুলী হস্তগত করিয়া কুমারী আরও দুর্জয় বিক্রমশালিনী হইয়া উঠিলেন। মধ্যে মধ্যে দুর্গ হইতে ধাওয়া করিয়া মারাঠাদিগকে ভীষণ মার দিতে লাগিলেন। শিবাজীর সৈন্যদল বহু উৎসাহ এবং পুরস্কারের প্রলোভনে উদ্বুদ্ধ এবং প্রলুব্ধ হইয়াও কুমারীর সহিত সন্মুখ-সংগ্রামে বৃহ বাধিয়া দাড়াইতে সমর্থ হইল না। কুমারী। আমিনা বানু যেমন বীৰ্যশালিনী, তেমনি অসাধারণ রূপবতী ছিলেন। বাল্যকাল হইতেই সমর-শাস্ত্রে তাঁহার গভীর অনুরাগ ছিল। অশ্বারোহণে, অন্নসঞ্চালনে, বৃহ-বিন্যাস কৌশলে, তোপ পরিচালনায়, তিনি অসাধারণ দক্ষতা লাভ করিয়াছিলেন। এক্ষণে সমরক্ষেত্রে সাক্ষাৎভাবে তাঁহার বীরত্ব, প্ৰতাপ, সাহস ও কৌশল দেখিয়া সকলেই বিমোহিত হইল । শিবাজী এই কুমারীর প্রতাপ ও সাহস দেখিয়া স্তম্ভিত হইয়া পড়িলেন। রমণীর রমণীয় রূপলাবণ্যের সহিত এই প্রকার বিস্ময়কর বীর্যশৌর্যের অপূর্ব সমাবেশ দেখিয়া শিবাজী এই রমণীরত্নকে লাভ করিবার জন্য উন্মত্ত হইয়া উঠিলেন। বলে পরাস্ত করিতে না পারিয়া কৌশল ও প্রলোভনে কুমারীকে হস্তগত করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কিছুদিনের জন্য যুদ্ধ বন্ধ রাখিয়া সন্ধির প্রস্তাব উথাপিত করা হইল। আমিনা বানুর অসাধারণ বীরত্ব ও কৌশলে শিবাজী নিতান্ত মুগ্ধ ও বিস্মিত হইয়াছেন, এইরূপ ভান করিয়া তাহার রাজ্য আক্রমণ করা সঙ্গত নহে বলিয়া প্ৰকাশ করিলেন। অতঃপর শিবাজী কৃষ্ণগড়ের অধিকারিণী আমিনা বানুৱ সহিত সন্ধি-বন্ধনে আবদ্ধ হইলেন। তিনি আর কখনও কৃষ্ণগড় আক্রমণ করা দূরে থাকুক, অন্য কেহ আক্রমণ করিলে, তিনি আততায়ীর বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ করবেন বলিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন। অতঃপর উভয় পক্ষ হইতে মিত্ৰতা স্বরূপ উভয় পক্ষকেই বিপুল আড়ম্বরে ভোজ প্ৰদান করা হইল। ভোজ শেষ হইলে, শিবাজী বহুমূল্য নানাবিধ বিলাস