পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অসাধারণ সৌন্দৰ্যশালী পুরুষরত্ন আফজাল খাকে দর্শন করিয়া প্রেমানুরাগে অধীর ও আকুল হইয়া উঠিয়াছে। যে মালোজীর সঙ্গে তারার বিবাহের কথা হইয়াছে, যে মালোজীর বীরত্বের কথা শুনিয়া এবং বীর্যপুষ্ট-দেহ-কান্তি এবং রূপত্রেী দেখিয়া তারাবাঈ মুগ্ধ হইয়াছিল, আজ সেই মালঞ্জীর শ্ৰী ও কান্তি তারার কাছে তেমন চিত্তবিনোদন বলিয়া আর প্রতিভাত হইতেছে না। তারা মনে মনে তাহার ইষ্টদেবতা শঙ্করকে ধন্যবাদ দিতে লাগিল যে, মালোজীৱ সহিত বিবাহের পূর্বেই সে আফজাল খাঁর ন্যায় পুরুষরত্বের দর্শন পাইয়াছে। আশার সহিত দারুণ নিরাশায় তাহার চিত্ত ঝঞানিল-সন্তাড়িত সরাসীর ম্যােয় উদ্বেলিত হইয়া উঠিয়াছে। আফজাল খাকে দেখিয়া তারার হৃদয়-মন তাহার চরণতলে লুটাইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু হায়! প্ৰকাশ্যে তাহা উৎসর্গ করিবার কোনও উপায় হইবে কি? পিতার শত্রুপক্ষীয় সেনাপতির প্রতি অনুরাগ, কি ভয়ানক কথা! কি অসম্ভব ব্যাপার! তারাবাঈ প্রেমোম্বেল চিত্তকে নানা প্রকারে শান্ত ও সংযমিত করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিল; কিন্তু কৃতকার্যতার অপেক্ষা পরাজয়ের মাত্রাই আরও বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তারা বড়ই বিপদে পড়ল। সে আফজাল খাকে যতই ভুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল, আফজাল খাঁর মূর্তি ততই উজ্জ্বল ও তাঁহার প্রতি প্রেমাশক্তি ততই শত গুণে দৃঢ় বদ্ধমূল হইতে লাগিল। তারার দুই কপােল বহিয়া অশ্রুধারা মুক্তাধারার ন্যায় গড়াইয়া পড়িতে লাগিল। তারা যতই পাঠানবীরকে ভুলিবার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিল, মন ততই বলিতে লাগিল, আহা! তাঁহাকে কি ভোলা যায়! কি চমৎকার মোহিনী মূর্তি। মরি! মরি। কি রূপেরই বাহার! কি কাস্তির ছটা! কি তেজঃ! বি, সাহস! কি ক্ষুর্তিা যেন সাক্ষাৎ কার্তিক। কি লাবণ্যের জোয়ার! কি ভুবনতুলানো অক্ষিযুগল! এমন নব্য যুবক, এমন সুঠাম ও সুশ্ৰী তেজৰী পুরুষ। হায়। উহার চরণে আত্মবলিদানেও যে সুখ। উহার কথা স্মরণ করিতেও যে হৃদয় অমৃত্যুরসে সিক্ত হইয়া যায়! তারাবাঈ, আফজাল খাকে ভুলিবার জন্য চেষ্টা করিয়া, আফজাল খার প্রোমোন্মাদনায় আরও উন্মত্ত হইয়া পড়িল! ধৈর্যের’ বাঁধ একেবারেই ভাঙ্গিয়া গেল। মনে হইতে লাগিল, কিসে যেন হৃৎপিণ্ডটােকে আফজাল খাঁর দিকে সবেগে আকর্ষণ করিতেছে! তাহার শরীরের অণু-পরমাণু যেন শরীর হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া আফজাল খােৱ প্ৰতি ভূটিয়া যাইতে চাহিতেছে। কি ভীষণ ব্যাপার। কি অভূতপূর্ব ঘটনা। যুবতী বিস্থিত এবং স্ততিত হইয়া পড়িলা বন্ধুত প্ৰেমেৱ আকর্ষণের নিকট সকল আকর্ষণই পরাস্ত। গ্রেমের প্রভাবের নিকট সকল প্রভাবকেই খৰ্ণ হইতে ইয়। মানব ক্ষুদ্র জীব। তাহার হৃদয়টি আরও ক্ষুদ্র। কিন্তু এই ক্ষুদ্র হৃদয়-সঞ্জাত প্রোমের ধারা সাৱা বিশ্বকে ভাসাইয়া দিতে পারে । ❖ዓ