পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগামী পঞ্চাশ বৎসরের জন্য গুজরাটের কুড়ি হাজার সৈন্যকে চিতোরের স্বতন্ত্র দুর্গে থাকিতে দিতে হইবে। মুসলমানদিগের বিচারের জন্য মুসলমান কাজী ও মুফতি নিযুক্ত হইবে। মুসলমানের মোকদ্দমা কাজী এবং মুফতি সাহেবের নিকট সম্পন্ন হইবে, প্রভৃতি শর্ত সাত দিবসের মধ্যে কবুল না করিলে গুজরাট সরকার সমর ঘোষণা করিবেন; ইহা স্পষ্ট করিয়া জানাইলেন। গুজরাট-অধীশ্বর সুলতান আহমদ শাহের পত্ৰ পাইয়া উদয়সিংহ একেবারে তেলে-বেগুনে জুলিয়া উঠিলেন। ক্রুদ্ধ হইয়া পত্ৰখানি খণ্ড খণ্ড করিয়া ছিড়িয়া ফেলিলেন। দূতকে অবমানিত করিয়া বিনা উত্তরে রাজসভা হইতে তাড়াইয়া দিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদ করায় রাণা উদয়সিংহ তাঁহাকেও কটুক্তি করিলেন। গুজরাটের দূত মোস্তফা খলিল অপমানিত হইয়া বিনা উত্তরে সুলতান আহমদ শাহু সমীপে ফিরিয়া আসিলে সমস্ত ঘটনা শুনিয়া মহাবীর সুলতান লাঙ্গুলাহত সিংহের ন্যায় গর্জন করিয়া উঠিলেন। সেনাপতি তাহার বেগকে ডাকিয়া চিতোর আক্রমণের আদেশ প্ৰদান করিলেন । যথাসময়ে পরদিবস গুজরাট-বাহিনী বিপুল বিক্রমে চিতোর-সীমান্ত আক্রমণ করিয়া কতিপয় গ্রাম দখল করিয়া ফেলিল। মোসলেম সৈন্যবাহিনী অজয়গড় নামক সীমান্তের একটি ক্ষুদ্র কেল্লা দখল করিয়া লইবার পরে চিতোরের চমূ আসিয়া গুজরাটের সৈন্যদলের গতিরোধ করিল। তাহের বেগের অশ্বারোহী সৈন্যের বিপুল পরাক্রমে চিতোরের সৈন্যদল বিষমরূপে রাস্ত হইয়া দিগ্বিদিকে পলায়ন করিল। আহ্মদ শাহ যাইয়া একেবারে চিতোর অবরোধ করিলেন। চিতোরের প্রাচীরের উপরে চতুর্দিকে পঞ্চশতাধিক বৃহৎ বৃহৎ কামান সুবিন্যস্ত ছিল। এই সমস্ত কামানের শেল প্ৰহারে গুজরাটের সৈন্যদল বিশেষ ক্ষয় প্রাপ্ত হইতে अगेिज । দশদিনের যুদ্ধে গুজরাটের অন্ততঃ পঞ্চদশ সহস্র সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করিল। রাণা উদয়সিংহ এবং সেনাপতি রুমী খান ভীষণ পরাক্রমে যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। সুলতান আহমদ শাহু গুজরাট হইতে আরও নূতন নূতন তোপ আনিয়া চিতোর দুর্গের একাংশ ধ্বংস করিয়া ভিতরে প্রবেশ করিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতে লাগিলেন । এইরূপে আরও কয়েকদিন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হইল। উভয় দলেই সহস্ৰ সহস্ৰ বীরপুরুষ অকালে সমর-সাগরে প্রাণ বিসর্জন করিতে লাগিল । একদা রজনীকালে সুলতান আহমদ শাহ বহুসংখ্যক ফানুসে দাহ্যমান পদার্থ ঝুলাইয়া উড়াইয়া দিলেন। ফানুসগুলি প্রবল পবনবেগে বিদ্যুৎগতিতে কেল্লার উপরে যাইয়া দাহ্যমান পদার্থের গুরুভার নিবন্ধন এবং অন্যদিকে গ্যাসের তৈল নির্বাপিত হওয়ায়, দুম দুম শব্দে নানান্থানে পতিত হইয়া চারিদিকে আগুন À)