পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুৰ্ণাবতী মুখরা ও আধিপত্যাপ্ৰিয়া হইলেও অত্যন্ত বদান্যা ও উদার-প্রকৃতি ছিলেন। লোকের গুণানুকীর্তনে সর্বদাই তাঁহাকে মুক্তকণ্ঠ দেখা যাইত। প্ৰতাপের কুৎসিৎ ব্যবহারই পরে তাঁহাকে মুখরা করিয়া তুলিয়াছিল। মাহতাব খাঁ রাণীর সীেতাগোৱ দিনে রাণীর হন্ত ও মুখ হইতে অনেক আর্থিক পুরষ্কার ও বাচনিক প্ৰশংসা পাইযাছিলেন বলিয়া রাণীকে তিনি মাতৃবৎ শ্রদ্ধা করিতেন। রাণীও মাহতাবকে পুত্রবৎ স্নেহের চক্ষে দেখিতেন। রাণীির মনোহরপুর নির্বাসনে এবং তাহার আধিপতা চুতিতে সর্বাপেক্ষা যদি কেহ দুঃখিত হইয়া থাকেন, তবে সে মাহতাব যা। রাণীর একটি কন্যা এবং একটি পুত্র। কন্যার বয়স অষ্টাদশ বৎসর, নাম অরুণাবতী । পুত্র শিশু, পঞ্চম বৎসর মাত্র বয়ঃক্রম। নাম অরুণকুমার। অরুণাবতী পূর্ণ যুবতী। আন্দ্রের ভরা গাঙ্গ, কুলে কুলে রূপ উছলিয়া পড়িতেছে। বক্ষে বক্ষে প্রেমের ভৱম আকুল উচ্ছাসে আবর্ত সৃষ্টি করিয়াছে। চােখে মুখে প্রেমের বিদ্যুজীণ্ডি স্কুরিত হইতেছে। প্রাণের পিপাসা বাড়িতে বাড়িতে এখন যেন উহা বিশ্ব-বিমোষিণী মূর্তি পরিগ্ৰহ করিতেছে। সুপক্ক আঙ্গুর বা রসােল আম্র যেমন বৃক্ষ-পৰু হইতে ফাট ফাটু হইয়া পড়ে, অরুণাবতীও তেমনি রসাবতী হইয়া ফাট ফাট প্রায়। তাহার হৃষ্ট-পুষ্ট সবল ও সুডৌল দেহে যৌবন পূর্ণ প্ৰতাপে রাজত্ব বিস্তাৱ করিয়াছে। তাহাকে দেখিলেই মনে হয় যে, রমণী বহুকষ্টে বহু সাধনায় যৌবনের প্রতাপ ও প্রতাকে আয়ত্ত রাখিতে সমর্থ হইয়াছে। যেন চন্দ্ৰমার সুবর্ণ কৌমুদীজাল বিস্নাত ভদ্রের সফেনতোয়া স্রোতস্বতী কুলে কুলে পূর্ণ হইয়া ফুলিয়া ফাঁপিয়া হেলিয়া দুলিয়া আবর্ত রচিয়া কল কল ছল ছল করিয়া দুটিয়া চলিয়াছে। এত বয়স এবং এত রূপের গৌরব থাকা সত্ত্বেও অরুণাবতীর বিবাহ হয় নাই। বিবাহ না হইবার কারণ পাত্র না জোট। পাত্র না জুটিবার কারণ প্রতাপাদিত্যের নিদারুশ নৃশংস পৈশাচিক ব্যবহার। কথাটা একটু খুলিয়াই বলিতেছি। ইতঃপূর্বে প্ৰতাপ তাহার জ্যেষ্ঠা কন্যা শ্ৰীমতী বিভাবতীর বিবাহ বাকলা চন্দ্ৰীপাধিপতি রামচন্দ্র রায়ের সহিত সম্পন্ন করিয়াছিলেন। এই রামচন্দ্ৰৰ ৱায়ের রাজ্য অধিকার করিবার জন্য প্ৰতাপের নিদ্ৰাকর্ষণ হইত না । কিন্তু রামচন্দ্র রায় জীবিত থাকিতে বিনাযুদ্ধে রাজ্য অধিকার করা অসম্ভব । যুদ্ধ করিলে প্ৰতাপই জিতিৰেন, তাহারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? রামচন্দ্ৰ ৱায় বার তুইয়ার এক কুঁইয়া ছিলেন। বিশেষতঃ তাহারই পাস্টনে পর্তুগীজ ও ওলন্দাজ একদল উৎকৃষ্ট পোলাৰদ্বাজ সেনা ছিল। তাহাজের তোপের জন্য ব্ৰতাপাদিতা ভীত ছিলেন। অগত্যা প্ৰতাপাদিত্য, জামাতাকে কোন পর্ব উপলক্ষে বিশেষ সমাদর ও ধুম-ধামের সহি৩ একদা নিমন্ত্ৰণ করিলেন। রামচন্দ্র রায় খণ্ডত্রের নিমন্ত্রণ পাইলা পরমহ্রাদে যশোৱে ৰাজপুরীতে আগম্বন করিলেন। প্রতাপাদিত গভীর নিশীথকালে জামাতা রামচন্দ্ৰ রাজকে উপাত্ত-ৰধ করিবার জন্য সমস্ত বন্দোবন্ত করিয়া ৱাখিলেন । নৱধ্যম পাৰিও একবারের জন্যও উতিন-যৌবনী কন্যােৱ ভবিষ্যৎ পর্যন্ত চিন্তা করিলেন না। 8 &ኃ