পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়িলেন। মাহতাৰ খাঁ নিদ্রিত হইয়া পড়িলে মাঝি ও মাল্লারা একস্থানে নীেকা লাগাইয়া সকলেই পলায়ন করিল। তাহাদের পলায়ন করিবার কারণ যে প্রতাপাদিত্যের কঠোর দণ্ডভীতি, তাহা বোধ হয় পাঠক বুঝিতে পারিতেছেন। খাঁ সাহেব যখন যশোরে নৌকায় আরোহণ করেন, তিনি যে যশোর হইতে পলায়ন করিতেছেন তখন মাঝিরা তাহা বুঝিতে পারে নাই । তিনি সলিমাবাদে বিশেষ কোন গোপনীয় রাজকাৰ্যে যাইতেছেন বলিয়াই তাহারা বুঝিয়াছিল; কিন্তু মনোহরপুর হইতে নীেকা ছাড়িলে অরুণাবতী যখন পলায়মানবেশে নীেকায় উঠিল তখন তাহারা বুঝিল যে, সেনাপতি প্রতাপাদিত্যের কন্যাকে কুলের বাহির করিয়া লইয়া পলায়ন করিতেছেন। তাহারা নিজেদের পরিণাম ভাবিয়া উদ্বিগ্ন হইল; তাহারাই মাহতাব খার পলায়নে সাহায্য করিয়াছে, প্রতাপ ইহা সহজেই জানিতে পরিবেন। জানিতে পারিলে তাহাদিগকে যে জান, বাচ্চা বুনিয়াদসহ জ্বলন্ত আগুনে পুড়াইয়া মারিবেন, ইহা স্মরণ করিয়া শিহরিয়া উঠিল। তাহাদের গায়ে ঘর্ম দুটিল। অন্যদিকে সেনাপতির ভয়ে নৌকা বাহনেও অস্বীকৃতি হইবার সাহস ছিল না। ঘটনা যতদূর গড়াইয়াছে তাহাতেই তাহদের প্রাণরক্ষা হইবে কি না সন্দেহের বিষয়। তবে নিজেদের অজ্ঞতা জানাইয়া সেনাপতির রাজকন্যা হরণের সংবাদ রাজাকে অৰ্পণ পূর্বক আপনাদের নির্দোষত্ব জ্ঞাপন করিতে পারিলে হয়ত প্রতাপাদিত্য তাহাদিগকে ক্ষমা করিতে পারেন, এই বিশ্বাসে তাহারা পলায়ন করিল। সেনাপতি সাহেব নিজের ব্যস্ততা এবং নিজের বিপচ্চিন্তার মধ্যে মাঝিদের বিপদের কথা একবারও ভাবিবার অবসর পান নাই । তিনি যেরূপ উদার ও মহন্দন্তঃকরণের লোক ছিলেন, তাহতে মাঝিরা নিজেদের বিপদের কথা খুলিয়া বলিলে, তাহাদিগকে নিজের সহস্র বিপদের মধ্যেও বিদায় করিয়া দিতেন । যাহা হউক, মাঝিরা পলায়ন করিবার প্রায় একপ্রহর পরে মাহতাব খাঁর নিদ্রা ভাঙ্গিল। তিনি দাঁড়ের শব্দ না শুনিয়া নীেকার ভিতর হইতে বাহির হইলেন। বাহির হইয়া দেখিলেন, মাঝি-মাল্লার কোন নিদর্শন নাই। নৌকা একগাছি রজ দ্বারা একটি গাছের মূলে বাধা রহিয়াছে। প্রকৃত রহস্য বুঝিতে তাঁহার বিলম্ব হইল না। তৎক্ষণাৎ তিনি অরুণাবতীকে জাগাইয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বুঝাইয়া বলিলেন। মাঝিদেৱ পলায়নে প্ৰতাপ-দুহিতা নিতান্ত উদ্বিগ্ন ও অধীর হইয়া পড়িল। পাছে বা পশ্চাদ্ধাবিত রাজ-অনুচরদের হস্তে ধৃত হওয়ায় উচ্ছসিত জীবনের উদাম সুখ ও প্রেমের কল্পনা মরীচিকার পরিণত হয়। তাহার হৃদয়-তরুণীর ধ্রুবনক্ষত্র, তাহৱ তৃষ্ণাৰ্ভ জীবনের সুশীতল অমৃত-প্রস্রবণ, তাহার জীবনাকাশের চিত্তবিনোদন লোচনারজন অপূর্ব জলধনু পরে বা বিপদগ্রােন্ত হয়, এবিবিধ চিন্তায় কিংকৰ্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িল। মাহতাব খাঁ মুহূর্তে চিত্ত স্থির করিয়া অরুণাবতীকে করুশাময় আত্মাহুতালার উপর নির্ভর কারতে বলিয়া শেষে বলিলেন, “প্রিয়ভামে। এ বিপদে (ጽእ)