পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্তরস্থ আত্মা ৩াহাকে নূতন বুদ্ধি-কৌশল উদ্ভাবনের কল্পনায় মাতাইয়া তোলে। স্বৰ্ণ দেখিল, অতিরাম স্বামীও তাহাতে মুজ এবং লুব্ধ। হেমন্দা এবং স্বামীজি উভয়েই তাহার শিকার। সুতরাং আপাততঃ একজনকে ভালোবাসার ছলনায় মুগ্ধ কবিতে পারিলেই অন্যের সহিত তাহার বিরোধ উপস্থিত অনিবাৰ্য। উভয়ের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত করিতে পারিলে, হয়ত তাহার উদ্ধার হইবার কোন পথ খুলিয়া যাইতে পারে। এই সংকল্পে স্থিরসিদ্ধান্ত হইয়া ক্ৰমে ক্রমে স্বামীজি এবং হেমন্দাকাম্ভেৱ সহিত কথোপকথন করিত্বে ও স্বামীজির প্রতি একটু বেশী ভালোবাসা দেখাইতে লাগিল। নানাপ্রকার উৎকৃষ্ট খাদ্য এবং দুষ্প্রাপ্য জিনিসের ফরমায়েস করিতে লাগিল। অন্যান্য লোক থাকিলে তাহার সঙ্কোচ ও লজা বোধ হয়, এই অছিলায় সমস্ত লোককে বিদায় করিয়া দেওয়াইল। এক্ষণে এই নিবিড় অরণ্যে স্বামীজি, হেমন্দা এবং স্বর্ণ ব্যতীত আর কেহই রহিল না। স্বৰ্ণকে লইয়া প্রথম প্রথম স্বামীজি ও শিষ্যের মধ্যে ঈর্ষা ও বিদ্বেষের সৃষ্টি, তৎপর অত্যন্ত্রকাল মধ্যেই কলহ হইতে লাগিল। স্বর্ণ চালাকী করিয়া সে কলহে স্বামীজির পক্ষ অবলম্বন করিতে লাগিল। শুধু তাই নয়, স্বামীজি সম্মুখে আসিলেই সে আনন্দ প্রকাশ করে, কিন্তু হেমন্দাকে দেখিলেই সে লজ্জা ও ঘূণায় ঘোমটা টানিয়া ৰসে। ইহাতে হেমন্দার দিনদিন স্বামীজির প্রতি জাতক্ৰোধ হইতে লাগিল। এই সময় স্বর্ণময়ী একদিন সুযোগ বুঝিয়া, হেমন্দা কাৰ্যোপলক্ষে একটু দূরে গেলে পর, স্বামীজিকে ডাকিয়া বলিল, “আমি যখন ভাগ্য-দোষে অকুলে পতিত হয়েছি, তখন কুলে উঠবার আর আশাও নাই, ইচ্ছাও নাই। কুলে উঠলে লোক-গঞ্জনায় গলায় কলসী বেঁধে ডুবে মরতে হবে। সুতরাং মনে করেছি, অকুলে থেকেই একটা কুলে আশ্রয় নেব। দুই কূল তো আশ্রয় করতে পারব না। একটা মন দুজনকে দিতে পারব না। গুরু থাকতে লঘুকে বরণ করতে পারব না। কিন্তু যেরূপ ব্যাপার দেখছি, তাতে বোধ হয়, শিষ্যই অবিলম্বে আমাকে উচ্ছিষ্ট করবে। কিন্তু সেরূপ হলে নিশ্চয় জেনে রেখ, আমি আত্মহত্যা করব। তোমাকেই স্ত্রী-হত্যার পাতকভাগী হতে হবে । ঠাকুর! যদি আমার জীবনে তোমার মমতা থাকে, তা হলে আমাকে নিয়ে পলায়ন কর।” অনলম্পর্শে তুবড়ীবাজি যেমন অসংখ্য ক্ষুলিঙ্গে প্রবলভাবে জুলিয়া উঠে, স্বৰ্ণময়ীর অনুরাগপূর্ণ হিত-পরামর্শে অভিরাম স্বামীর হৃদয় আশা, আনন্দ ও উৎসাহে তেমনি নাচিয়া উঠিল। কুকুর। যেমন প্রভুহন্ত হইতে মাংসখণ্ড পাইবার সম্ভাবনায় আনন্দে নৃত্য করিয়া উঠে, কাম-কুকুর অভিরাম স্বামীও স্বর্ণময়ীর পরামর্শে তেমনি আনন্দে নৃত্যু করিতে লাগিল। তাহার হৃদয়-উদ্যানের শুষ্ক কুৱে সহস্য লক্ষ কুসুম ফুটিয়া উঠিল! স্বৰ্গ-রাজ্য তাহার চরণতলে গড়াগড়ি যাইতে লাগিল। নিরাশার মরুসৈকত বিপ্লাবিত করিয়া সুপ্ত প্রেমের ক্ষুদ্র নির্বাের, যাহা কেবল তাহার হৃদয়ের Գ3