পাতা:সিরাজী উপন্যাস সমগ্র.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভোগ অনিবাৰ্য। কিন্তু পরকাল অপেক্ষা ইহকালে দণ্ড ভোগ অনেক সুখের । মহারাজ! আপনি পূর্বে যে স্বর্ণময়ীকে হরণ করবার জন্য চেষ্টা করেছিলেন, সেই পাপের ফলে আপনার এই পরাজয়, লোকক্ষয়, ধনক্ষয়, অপযশ এবং লাঞ্ছনা ভোগ করতে হল। পাপের শান্তি তথন না হলে অনেকে মনে করে উহা পাপ নহে। কিন্তু ইহা অত্যন্ত ভুল। পাপ কঠোর শান্তি প্রসবের জন্যই সময় গ্রহণ করে থাকে।” অতঃপর ঈসা খাঁ অরুণাবতীর বিবাহের কথা পাড়িলেন। প্ৰতাপ সাশ্রনেত্রে বলিলেন, “সেনাপতি সাহেবের সঙ্গে পূর্ব হতেই অরুণাবতীর বিবাহ দিবার জন্য আমার সংকল্প ছিল। আমার দুর্মাতিবশতঃই তাঁর সহিত আমার বিরোধ ও শক্ৰতা জন্মে ছিল, কিন্তু তিনি আজ আমাকে আসন্নমৃত্যু হতে রক্ষা করেছেন। তাঁর উদারতা ও মহত্ত্বে আমি যথেষ্ট লজ্জিত এবং আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। তাঁর ন্যায় মহানুভব এবং হৃদয়বান পরমোপকারী ব্যক্তির করে কন্যাদান করতে পারলে এক্ষণে আমি পরম সুখ ও’গৌরব অনুভব করব। আমার অরুণাবতী-রূপ মাধবীলতা উপযুক্ত সহকারকেই আশ্রয় করেছে।” অতঃপর প্রতাপাদিত্য বিবাহের তারিখ নির্দিষ্ট করিয়া অরুণাবতীকে সঙ্গে লইয়া যশোহরে ফিরিয়া Cirr মাহতাব খ্যা ঈসা খাঁর সৈন্যদলে চাকুরী গ্ৰহণ করিলেন। প্রতাপাদিত্য রাজধানীতে প্ৰত্যাগত হইয়া কয়েকদিন পরে, গভীর দুঃখ এবং শোকের সহিত ঈসা খাঁ ও মাহতাব খাকে লিখিয়া জানাইলেন যে, বসন্ত রোগের আক্রমণে অরুণাবতী সহসা পরলোক গমন করিয়াছে। মাহতাব খাঁ এই দারুণ সংবাদে মর্মাহত হইয়া পড়িলেন। আশার জ্যোৎস্না চির আঁধারে ঢাকিয়া গেল। অরুণাবতীর যে অরুশিমাজাল তাহার হৃদয়ে আলোক-প্রবাহ ও আনন্দের উৎস সৃষ্টি করিয়াছিল, তাহা সূচিভেদ্য অন্ধকারে পরিণত হইয়া অনন্ত বিষাদ ও অনন্ত শোকের প্রবাহ সৃষ্টি করিল। হায় প্রেম। হায় সুখ! তােমাদের আশা এমনি করিয়া মানুষের হৃদয় চিরকাল ভাজিতেছে, জ্বালাইতেছে এবং নিষ্পেষণ করিতেছে। তোমাদের দুইজনের মোহে এই বিশ্ব-সংসার মুক্ত হইয়া দুটিতেছে। তাহার ফলে—নিরাশা, অবিশ্বাস, অপ্রাণ্ডি; তাহার ফলে—শোক, দুঃখ, বিষাদ ও হাহাকারে বিশ্ব-সংসার পরিপূর্ণ হইতেছে। ঈসা খাঁ এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় যারপর-নাই ব্যথিত হইলেন। তিনি মাহতাব খার প্রতি গভীর সহানুভূতি প্ৰদৰ্শন করিয়া তাহাকে নানারূপে সাত্মনা করিতে ও প্ৰবোধ দিতে লাগিলেন। অন্য স্থানে তাহার বিবাহের প্রস্তাৰ করিতে চাহিলেন, কিন্তু মাহতাৰ খাঁ আর বিবাহ কৱিবেন। না বলিয়া দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ হইলেন । ሳእ)