পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড—তৃতীয় পরিচ্ছেদ సె\లి আছে—আমি মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি, আমার ধৰ্ম্ম এই, কৰ্ম্ম এই, যশ এই, স্বর্গ এই—মহারাজ ! অপরাধিনী হইয়া থাকি, তবে দণ্ড করুন—” শুনিয়া দর্শকমণ্ডলী অশ্রুপূর্ণ হইয়া পুনঃ পুন: জয়ধ্বনি করিতে লাগিল। কিন্তু লোক ভাল মন্দ দুই রকমই আছে—অনেকেই জয়ধ্বনি করিতে লাগিল—কিন্তু আবার অনেকেই তাহাতে যোগ দিল না। জয়ধ্বনি ফুরাইলে তাহারা কেহ অৰ্দ্ধস্ফুট স্বরে বলিল, “আমার ত এ কথায় বিশ্বাস হয় না।” কোন বর্ষীয়সী বলিল, “পোড়া কপাল ! বাত্রে মানুষ ডাকিয়া নিয়া গিয়াছেন—উনি আবার সতী ।” কেহ বলিল, “রাজা এ কথায় ভুলেন ভুলুন—আমরা এ কথায় ভুলিব না।” কেহ বলিল, “রাণী হইয়া যদি উনি এই কাজ করিবেন, তবে আমরা গরিব দুঃখী কি না করিব ?” এ সকল কথা সীতারামের কাণে গেল। তখন রাজা রমাকে বলিলেন, “প্রজাবৰ্গ সকলে ত তোমার কথা বিশ্বাস করিতেছে না।” রম কিছুক্ষণ মুখ অবনত করিয়া রহিল । চক্ষুতে প্রবল বারিধারা বহিল—তার পর রমা সামলাইল। তখন মুখ তুলিয়া রাজাকে সম্বোধন করিয়া বলিতে লাগিল, “যখন লোকের বিশ্বাস হইল না, তখন আমার এক মাত্র গতি—আপনার রাজপুরীর কলঙ্কস্বরূপ এ জীবন আর রাখিতে পারিব না। আপনি চিতা প্রস্তুত করিতে আজ্ঞা দিন-আমি সকলের সম্মুখেই পুড়িয়া মরি। দুঃখ তাহাতে কিছু নাই। লোকে আমাকে কলঙ্কিনী বলিল—মরিলেই সে দুঃখ গেল। কিন্তু এক নিবেদন মহারাজ ! আপনিও কি আমাকে অবিশ্বাসিনী ভাবিতেছেন ? তাহা হইলে বুঝি—( আবার রমার চক্ষুতে জলের ধারা ছুটিল, )—বুঝি আমার পুড়িয়া মরাও বৃথা হইবে । তুমি যদি এই লোকসমারোহের সম্মুখে বল যে, আমার প্রতি তোমার অবিশ্বাস নাই—তাহ হইলে আমি সেই চিতাই স্বৰ্গ মনে করিব। মহারাজ ! পরলোকের উদ্ধারকত্তা, ভূদেব তুল্য আমার গুরুদেব এই সম্মুখে । আমি তাহার সম্মুখে, ইষ্টদেবকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, আমি অবিশ্বাসিনী নহি। যিনি গুরুর অপেক্ষাও আমার পূজ্য, যিনি মনুষ হইয়াও দেবতার অপেক্ষ আমার পূজ্য, সেই পতিদেবতা, আপনি স্বয়ং আমার সম্মুখে—আমি পতিদেবতাকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি, আমি অবিশ্বাসিনী নহি। মহারাজ ! এই নারীদেহ ধারণ করিয়া যে কিছু দেবসেবা, ব্রাহ্মণসেবা, দান ব্রত নিয়ম করিয়াছি, যদি আমি বিশ্বাসঘাতিনী হইয়া থাকি, তবে সে সকলেরই ফলে যেন বঞ্চিত হই। পতিসেবার অপেক্ষা স্ত্রীলোকের আর পুণ্য নাই, কায়মনোবাক্যে আমি যে আপনার চরণসেবা করিয়াছি, তাহা আপনিই জানেন,— আমি যদি অবিশ্বাসিনী হইয়া থাকি, তবে আমি যেন সে পুণ্যফলে বঞ্চিত হই। আমি ~