শ্রী। আর এক ভিক্ষা এই, যদি আমাকে গৃহে থাকিতে হইল, তবে আমাকে এই রাজপুরীমধ্যে স্থান না দিয়া, আমাকে একটু পৃথক্ কুটীর তৈয়ার করিয়া দিবেন। আমি সন্ন্যাসিনী, রাজপুরীর ভিতর আমিও সুখী হইব না, লোকেও আপনাকে উপহাস করিবে।
সীতা। আর কুটীরে রাজমহিষীকে রাখিলে লোকে উপহাস করিবে না কি?
শ্রী। রাজমহিষী বলিয়া কেহ নাই জানিল।
সীতা। আমার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হইবে না কি?
শ্রী। সে আপনার অভিরুচি।
সীতা। তোমার সঙ্গে আমি দেখা শুনা করিব, অথচ তুমি রাজমহিষী নও; লোকে তোমাকে কি বলিবে জান?
শ্রী। জানি বৈ কি! লোকে আমাকে রাজার উপপত্নী বিবেচনা করিবে। মহারাজ! আমি সন্ন্যাসিনী—আমার মান অপমান কিছুই নাই। বলে বলুক না। আমার মান অপমান আপনারই হাতে।
সী। সে কি রকম?
শ্রী। আমি তোমার সহধর্ম্মিণী—আমার সঙ্গে ধর্ম্মাচরণ ভিন্ন অধর্ম্মাচরণ করিও না। ধর্ম্মার্থে ভিন্ন যে ইন্দ্রিয়পরিতৃপ্তি, তাহা অধর্ম্ম। ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পশুবৃত্তি। পশুবৃত্তির জন্য বিবাহের ব্যবস্থা দেবতা করেন নাই। পশুদিগের বিবাহ নাই। কেবল ধর্ম্মার্থেই বিবাহ। রাজর্ষিগণ কখনও বিশুদ্ধচিত্ত না হইয়া সহধর্ম্মিণীসহবাস করিতেন না। ইন্দ্রিয়বশ্যতা মাত্রই পাপ। আপনি যখন নিষ্পাপ হইয়া, শুদ্ধচিত্তে আমার সঙ্গে আলাপ করিতে পারিবেন, তখন আমি এই গৈরিক বস্ত্র ছাড়িব। যতদিন আমি এ গেরুয়া না ছাড়িব, ততদিন মহারাজ! তোমাকে পৃথক্ আসনে বসিতে হইবে।
সী। আমি তোমার প্রভু, আমার কথাই চলিবে।
শ্রী। একবার চলিতে পারে, কেন না, তুমি বলবান্। কিন্তু আমারও এক বল আছে। আমি বনবাসিনী, বনে আমরা অনেক প্রকার বিপদে পড়ি। এমন বিপদ্ ঘটিতে পারে যে, তাহা হইতে উদ্ধার নাই। সে সময়ে আপনার রক্ষার জন্য আমরা সঙ্গে একটু বিষ রাখি। আমার নিকট বিষ আছে—আবশ্যক হইলে খাইব।
হায়! এ শ্রী ত সীতারামের শ্রী নয়।