o f অষ্টম পরিচ্ছেদ সীতারাম তাহা বুঝিয়াও বুঝিলেন না । মন কিছুতেই বুঝিল না। যাহার ভালবাসার জিনিষ মরিয়া যায়, সেও মৃত দেহের কাছে বসিয়া থাকে, কিছু ক্ষণ বিশ্বাস করে না যে, আর নিশ্বাস নাই। পাগল লিয়রের মত দর্পণ খুজিয়া বেড়ায়, দর্পণে নিশ্বাসের দাগ ধরে কি না। সীতারাম এত বৎসর ধরিয়া, মনোমধ্যে একটা শ্ৰীমূৰ্ত্তি গড়িয়া, তাহার আরাধনা করিয়াছিল। বাহিরে স্ত্রী যাই হোক, ভিতরের শ্ৰী তেমনিই আছে। বাহিরের শ্ৰীকেই ত সীতারাম হৃদয়ে বসাইয়া রাখিয়াছিলেন, সেই বাহিরের ঐ ত বাহিরেই আছে, তবে সে হৃদয়ের শ্ৰী হইতে ভিন্ন কিসে ? ভিন্ন বলিয়া সীতারাম বারেক মাত্রও ভাবিতে পারিলেন না। লোকের বিশ্বাস আর সব যাই হৌক, লোকে মনে করে, মানুষ যা তাই থাকে। মানুষ যে কত বার মরে, তাহা আমরা বুঝি না। এক দেহেই কত বার যে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে, তাহা মনেও করি না। সীতারাম বুঝিল না যে, সে শ্ৰী মরিয়াছে, আর একটা শ্ৰী সেই দেহে জন্মগ্রহণ করিয়াছে। মনে করিল যে, আমার শ্ৰী আমার ত্রীই আছে। তাই স্ত্রীর চড়া চড়া কথাগুলা কাণে তুলিল না। তুলিবারও বড় শক্তি ছিল না। শ্ৰীকে ছাড়িলে সব ছাড়িতে হয়। ... তা, স্ত্রী কিছুতেই রাজপুরীমধ্যে থাকিতে রাজি হইল না। তখন সীতারাম “চিত্তবিশ্রাম” নামে ক্ষুদ্র অথচ মনোরম প্রমোদভবন শ্রীর নিবাসার্থ নির্দিষ্ট করিয়া দিলেন। শ্ৰী তাহাতে বাঘছাল পাতিয়া বসিল । রাজা প্রত্যহ তাহার সাক্ষাৎ জন্য যাইতেন। পৃথক আসনে বসিয়া তাহার সঙ্গে আলাপ করিয়া ফিরিয়া আসিতেন । ইহাতে রাজার পক্ষে বড় । বিষময় ফল ফলিল । আলাপট। কি রকম হইল মনে কর ? রাজা বলিতেন ভালবাসার কথা, স্ত্রীর জন্য তিনি এত দিন যে দুঃখ পাইয়াছেন তাহার কথা, শ্ৰী ভিন্ন জীবনে তাহার আর কিছুই নাই, সেই কথা । কত দেশে কত লোক পাঠাইয়াছেন, কত দেশে নিজে কত খুজিয়াছেন, সেই কথা। ঐ বলিত, কত পৰ্ব্বতের কথা, কত অরণ্যের কথা, কত বন্য পশু পক্ষী ফল মূলের কথা, কত যতি পরমহংস ব্রহ্মচারীর কথা, কত ধৰ্ম্ম অধৰ্ম্ম, কৰ্ম্ম অকৰ্ম্মের কথা, কত পৌরাণিক উপন্যাসের কথা, কত দেশবিদেশী রাজার কথা, কত দেশাচার লোকাচারের কথা । শুনিতে শুনিতে, সেই পৃথক আসনে বসিয়াও রাজার বড় বিপদ হইল! কথাগুলি বড় মনোমোহিনী । যে বলে, সে আরও মনোমোহিনী । আগুন ত জ্বলিয়াই ছিল, এবার
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।