পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

333 . সীতারাম কবিরাজ মহাশয়েরা, কেবল বচন ঝাড়িয়া নিশ্চিন্ত রহিলেন, এমন নিন্দ আমরা করি না। তাহারা নানাপ্রকার ঔষধের ব্যবস্থা করিলেন। কেহ বটিক, কেহ গুড়া, কেহ স্থত, কেহ তৈল ; কেহ বলিলেন, ঔষধ প্রস্তুত করিতে হইবে, কেহ বলিলেন, আমার কাছে যাহা প্রস্তুত আছে, তেমন আর হইবে না। যাই হউক, রাজার বাড়ী, রাণীর রোগ, ঔষধের প্রয়োজন থাক, না থাক, নুতন প্রস্তুত হইবে না, এমন হইতে পারে না। হইলে দশ জনে ছটাক ছসিক উপার্জন করিতে পারে, অতএব ঔষধ প্রস্তুতের ধুম পড়িয়া গেল। কোথাও হামানদিস্তায় মূল পিষ্ট হইতেছে, কোথাও ঢেকিতে ছাল কুটিতেছে, কোথাও হাড়িতে কিছু সিদ্ধ হইতেছে, কোথাও খুলিতে তৈলে মূৰ্ছন পড়িতেছে। রাজবাড়ীর এক জন পরিচারিকা এক দিন দেখিয়া বলিল, “রাণী হইয়া রোগ হয়, সেও ভাল।” যার জন্য ঔষধের এত ধুম, তার সঙ্গে ঔষধের সাক্ষাৎ সম্বন্ধ বড় অল্প। কবিরাজ মহাশয়ের ঔষধ যোগাইতেন না, তা নয়। সে গুণে র্তাহাদের কিছু মাত্র ক্রটি ছিল না। তবে রমার দোষে সে যত্ন বৃথা হইল—রম ঔষধ খাইত না । মুরলার বদলে, যমুনা নামী এক জন পরিচারিকা, রাণীর প্রধান দাসী হইয়াছিল। যমুনাকে একটু প্রাচীন দেখিয়া নন্দ৷ তাহাকে এই পদে অভিষিক্ত করিয়াছিলেন। আমরা এমন বলিতে পারি না যে, যমুনা আপনাকে প্রাচীন বলিয়া স্বীকার করিত ; শুনিয়াছি, কোন ভৃত্যবিশেষের এ বিষয়ে সম্পূর্ণ মতান্তর ছিল ; তথাপি স্থূল কথা এই যে, যমুনা একটু প্রাচীন চালে চলিত, রমাকে বিলক্ষণ যত্ন করিত ; রোগিণীর সেবার কোন প্রকার ত্রুটি না হয়, তদ্বিষয়ে বিশেষ মনোযোগিনী ছিল। রমার জন্য কবিরাজেরা যে ঔষধ দিয়া যাইত, তাহা তাহারই হাতে পড়িত ; সেবন করাইবার ভার তাহার উপর। কিন্তু সেবন করান তাহার সাধ্যাতীত ; রম কিছুতেই ঔষধ খাইত না । এ দিকে রোগের কোন উপশম নাই, ক্রমেই বৃদ্ধি, রম আর মাথা তুলিতে পারে না। দেখিয়া শুনিয়া যমুনা স্থির করিল যে, সে সকল কথা বড় রাণীকে গিয়া জানাইবে । অতএব রমাকে বলিল, “আমি বড় মহারাণীর কাছে চলিলাম ; ঔষধ তিনি নিজে আসিয়া খাওয়াইবেন।” so রম বলিল, “বাছা! মৃত্যুকালে আর কেন জ্বালাতন করিস্ ! বরং তোর সঙ্গে একটা বন্দোবস্ত করি।” যমুনা জিজ্ঞাসা করিল, “কি বন্দোবস্ত মা ?” রম । তোমার এই ঔষধগুলি আমারে বেচিবে ? আমি এক এক টাকা দিয়া এক একটা বড়ি কিনিতে রাজি আছি।