নন্দ স্বীকৃত হইয়া কবিরাজদিগকে বিদায় দিল। পরে রমার কাছে আসিয়া সব বলিল। রমা অল্প হাসিল, বেশী হাসিবার শক্তিও নাই, মুখে স্থানও নাই ; মুখ বড় ছোট হইয়া গিয়াছে। নন্দ জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিলি যে ?” রম আবার তেমনি হাসি হাসিয়া বলিল, “ঔষধ খাব না।” নন্দ । ছি দিদি ! যদি এত ওষুধ খেলে, ত আর তিনটা দিন খেতে কি ? রম । আমি ওষুধ খাই নাই। নন্দ চমকিয়া উঠিল,—বলিল, “সে কি ? মোটে না ?” রমা। সব বালিশের নীচে আছে । - নন্দ বালিশ উল্টাইয়া দেখিল, সব আছে বটে। তখন নন্দ বলিল, “কেন বহিন— এখন আর আত্মঘাতিনী হইবে কেন ? পাপ ত মিটিয়াছে।” রমা। তা নয়—ঔষধ খাব। - - নন্দ । আর কবে খাবি ? রম । যবে রাজা আমাকে দেখিতে আসিবেন। ঝর ঝর করিয়া রমার চোক দিয়া জল পড়িতে লাগিল । নন্দারও চক্ষে জল আসিল । আর এখন সীতারাম রমাকে দেখিতে আসেন না। সীতারাম চিত্তবিশ্রামে থাকেন। নন্দা চোখের জল মুছিয়া বলিল, “এবার এলেই তোমাকে দেখিতে আসিবেন।” দ্বাদশ পরিচ্ছেদ “এবার এলেই তোমাকে দেখিতে আসিবেন,” এই কথা বলিয়া নন্দ রমাকে আশ্বাস দিয়া আসিয়াছিল। সেই আশ্বাসে রম কোন রকমে বাচিয়াছিল—কিন্তু আর বুঝি বঁাচে না। নন্দ তাহাকে যে আশ্বাসবাক্য দিয়া আসিয়াছে, নন্দাও তাহা জপমালা করিয়াছিল, কিন্তু রাজাকে ধরিতে পারিতেছিল না। যদি কখনও ধরে, তবে “আজ না---কাল” করিয়া রাজা প্রস্থান করেন। নন্দা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল যে, কিছুতেই সে সীতারামের উপর রাগ করিবে না। ভাবিল, রাজাকে ত ডাকিনীতে পেয়েছে সত্য, কিন্তু তাই ব’লে আমায় যেন ভূতে না পায়। আমার ঘাড়ে রাগ ভূত চাপিলে—এ সংসার এখন আর রাখিবে
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।