তৃতীয় খণ্ড—ষোড়শ পরিচ্ছেদ 5えめ রাজপুরুষের শূলে গেল, আদায় তহশীলের ভারপ্রাপ্ত কৰ্ম্মচারীর কারাগারে গেল, বাকিদারের আবদ্ধ হইল, প্রজা সব পলাইল, রাজ্য ছারখারে যাইতে লাগিল । শেষ সীতারাম স্থির করিলেন, স্ত্রীর প্রতি বলপ্রয়োগই করিবেন। কথাটা মনোমধ্যে স্থির হইয়া কার্ষ্যে পরিণত হইতে না হইতেই অকস্মাৎ এক গোলযোগ উপস্থিত হইল। চন্দ্রচূড় ঠাকুর রাজাকে আর এক দিন পাকড়া করিয়া বলিলেন, “মহারাজ ! তীৰ্থপৰ্যটনে যাইব ইচ্ছা করিয়াছি। আপনি অনুমতি করিলেই যাই।” কথাটা রাজার মাথায় যেন বজ্রাঘাতের মত পড়িল। চন্দ্রচূড় গেলে নিশ্চয়ই ঐকে পরিত্যাগ করিতে হইবে, নয় রাজ্য পরিত্যাগ করিতে হইবে। অতএব রাজা চন্দ্রচূড় ঠাকুরকে তীর্থযাত্রা হইতৃে নিবৃত্ত করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। এখন চন্দ্রচূড় ঠাকুরের স্থির সিদ্ধান্ত এই যে, এ পাপ রাজ্যে আর বাস করিবেন না, এই পাপিষ্ঠ রাজার কৰ্ম্ম আর করিবেন না । অতএব তিনি সহজে সম্মত হইলেন না। অনেক কথাবাৰ্ত্ত হইল। চন্দ্রচূড় অনেক তিরস্কার করিলেন। রাজাও অনেক উত্তর প্রত্যুত্তর করিলেন। শেষে চন্দ্রচূড় থাকিতে সম্মত হইলেন। কিন্তু কথায় কথায় অনেক রাত্রি হইল। কাজেই রাজা সে দিন চিত্তবিশ্রামে গেলেন না। এদিকে চিত্তবিশ্রামে সেই । রাত্রে একটা কাণ্ড উপস্থিত হইল। ষোড়শ পরিচ্ছেদ সেই দিন দৈবগতিকে চিত্তবিশ্রামের দ্বারদেশে এক জন ভৈরবী আসিয়া দর্শন দিল । এখন চিত্তবিশ্রাম ক্ষুদ্র প্রমোদগ্ৰহ হইলেও রাজগৃহ ; জনকত দ্বারবানও দ্বারদেশে আছে। ভৈরবী দ্বারবানদিগের নিকট পথ ভিক্ষা করিল। দ্বারবানের বলিল, “এ রাজবাড়ী—এখানে একটি রাণী থাকেন। কাহারও যাইবার হুকুম নাই।” বলা বাহুল্য যে, রাজাদিগের উপরাশীরাও ভূতাদিগের নিকট রাণী নাম পাইয়া থাকে। - ভৈরবী বলিল, “আমার তাহা জানা আছে। রাজাও আমায় জানেন। আমার যাইবার নিষেধ নাই। তোমরা গিয়া রাজাকে জানাও।” দ্বারবানেরা বলিল, “রাজা এখন এখানে নাই—রাজধানী গিয়াছেন।”
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।