শ্যামচাঁদ। ব্যাপারটা কি জান না? সেই ডাকিনীটা পালিয়েছে।
রাম। তা শুনেছি। আচ্ছা, সে ডাকিনীটা ত এত যাগ যজ্ঞে কিছুতেই গেল না— এখন আপনি পালাল যে?
শ্যাম। আপনি কি আর গিয়েছে? (চুপি চুপি) বল্তে গায়ে কাঁটা দেয়। সে নাকি দেবতার তাড়নায় গিয়েছে।
রাম। সে কি?
শ্যাম। এই নগরে এক দেবী অধিষ্ঠান করেন শুন নি? তিনি কখন কখন দেখা দেন—অনেকেই তাঁকে দেখেছে। কেন, যে দিন ছোট রাণীর পরীক্ষা হয়, সে দিন তুমি ছিলে না?
রাম। হাঁ! হাঁ! সেই তিনিই! আচ্ছা, বল দেখি তিনি কে?
শ্যাম। তা তিনি কি কারও কাছে আপনার পরিচয় দিতে গিয়েছেন! তবে পাঁচ জন লোকে পাঁচ রকম বল্চে।
রাম। কি বলে?
শ্যাম। কেউ বলে, তিনি এই পুরীর রাজলক্ষ্মী। কেউ বলে, তিনি স্বয়ং লক্ষ্মীনারায়ণ জিউর মন্দির হইতে কখনও কখনও রূপ ধারণ ক’রে বা’র হন, লোকে এমন দেখেছে। কেউ বলে, তিনি স্বয়ং দশভুজা; দশভুজার মন্দিরে গিয়া অন্তর্দ্ধান হ’তে তাঁকে না কি দেখেছে।
রাম। তাই হবে। নইলে তিনি ভৈরবীবেশ ধারণ করবেন কেন? সে সভায় ত তিনি ভৈরবীবেশে অধিষ্ঠান করেছিলেন?
শ্যাম। তা যিনিই হ’ন, আমাদের অনেক ভাগ্য যে, আমরা তাঁকে সে দিন দর্শন করেছিলাম। কিন্তু রাজার এমনই মতিচ্ছন্ন ধরেছে যে—
রাম। হাঁ—তার পর ডাকিনীটা গেল কি ক’রে শুনি।
শ্যাম। সেই দেবী, ডাকিনী হ’তে রাজ্যের অমঙ্গল হ’চ্ছে দেখে, এক দিন ভৈরবীবেশে ত্রিশূল ধারণ ক’রে তাকে বধ করতে গেলেন।
রাম। ইঃ! তার পর?
শ্যাম। তার পর আর কি? মার রণরঙ্গিণী মূর্ত্তি দেখে, সেটা তালগাছ প্রমাণ বিকটাকার মূর্ত্তি ধারণ ক’রে ঘোর গর্জ্জন কর্তে কর্তে কোথায় যে আকাশপথে উড়ে গেল, কেউ আর দেখ্তে পেলে না।