১২৮ সীতারাম রাম। কে বললে ? শু্যাম। বললে আর কে ? যারা দেখেছে, তারাই বলেছে। রাজা এমনই সেই ডাকিনীর মায়ায় বদ্ধ যে, সেটা গেছে বলে চিত্তবিশ্রামের যত দ্বারবান দাস দাসী, সবাইকে ধরে এনে কয়েদ করেছেন। তারাই এই সব কথা প্রকাশ করেছে। তারা বলে, “মহারাজ ! আমাদের অপরাধ কি ? দেবতার কাছে আমরা কি করব ?” রাম । গল্প কথা নয় ত ? শু্যাম । এ কি আর গল্প কথা ! . রাম। কি জানি। হয় ত ডাকিনীটা মড়া ফন্ড্রা খাবার জন্য রাত্রিতে কোথা বেরিয়ে গিয়েছিল, আর আসে নি। এখন রাজার পীড়াপীড়িতে তারা আপনার বাচন জন্য একটা রচে মচে বলচে । শু্যাম। এ কি আর রচা কথা ? তারা দেখেছে যে, সেটার এমন এমন মূলোর মত দাত, শোনের মত চুল, বারকোশের মত চোক, একটা আস্ত কুমীরের মত জিব, দুটো জালার মত দুটো স্তন, মেঘগর্জনের মত নিশ্বাস, আর ডাকেতে একেবারে মেদিনী বিদীর্ণ। রাম। সৰ্ব্বনাশ ! এ ত বড় অদ্ভুত ব্যাপার! রাজার মতিচ্ছন্ন ধরেছে বলছিলে কি ? শুাম। তাই বলচি শোন না। এই ত গেল নিরপরাধী বেচারাদের নাহক কয়েদ । তার পর, সেই ডাকিনীটাকে খুজে ধরে আনবার জন্য রাজ ত দিক বিদিকে কত লোকই পাঠাচ্চেন। এখন সে আপনার স্বস্থানে চলে গেছে, মনুষ্যের সাধ্য কি যে, তাকে সন্ধান ক’রে ধীরে আনে। কেউ তা পারচে না—সবাই এসে যোড় হাত ক’রে এত্তেলা করছে যে, সন্ধান করতে পারলে না। রাম। তাতে রাজা কি বলেন ? শু্যাম। এখন যাই কেউ ফিরে এসে বলচে যে, সন্ধান পেলে না, অমনই রাজা তাকে কয়েদে পাঠাচ্চেন। এই করে ত হাবুজখানা পরিপূর্ণ। এ দিকে রাজপুরুষদের এমনই ভয় লেগেছে যে, বাড়ী, ঘর, দ্বার, স্ত্রী, পুত্র ছেড়ে পালাচ্চে। দেখাদেখি নগরের প্রজ দোকানদারও সব পালাচ্চে । রাম । তা, দেবী কি করেন ? তিনি কটাক্ষ করিলেই ত এই সকল নিরপরাধী লোক রক্ষা পায় ।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।