শ্যাম। তিনি সাক্ষাৎ ভগবতী। তিনি এই সকল ব্যাপার দেখিয়া ভৈরবীবেশে রাজাকে দর্শন দিয়া বলিলেন, “রাজা! নিরপরাধীর পীড়ন করিও না। নিরপরাধীর পীড়ন করিলে, রাজার রাজ্য থাকে না। এদের কোন দোষ নাই। আমিই সেটাকে তাড়াইয়াছি—কেন না, সেটা হ’তে তোমার রাজ্যের অমঙ্গল হতেছিল। দোষ হয়ে থাকে, আমারই হয়েছে। দণ্ড করিতে হয়, ওদের ছেড়ে দিয়ে আমারই দণ্ড কর।
রাম। তার পর?
শ্যাম। তাই বল্ছিলাম, রাজার বড় মতিচ্ছন্ন ধরেছে। সেটা পালান অবধি রাজার মেজাজ এমন গরম যে, কাক পক্ষী কাছে যেতে পাচ্চে না। তর্কালঙ্কার ঠাকুর কাছে গিয়েছিলেন, বড় রাণী কাছে গিয়েছিলেন, গাল খেয়ে পালিয়ে এলেন।
রাম। সে কি! গুরুকে গালি গালাজ? নির্ব্বংশ হবেন যে!
শ্যাম। তার কি আর কথা আছে? তার পর শোন না। গরম মেজাজের প্রথম মোহড়াতেই সেই দেবতা গিয়া দর্শন দিয়া ঐ কথা বললেন। বলতেই রাজা চক্ষু আরক্ত করিয়া তাঁকে স্বহস্তে প্রহার করিতেই উদ্যত। তা না ক’রে, যা করেছে, সে ত আরও ভয়ানক!
রাম। কি করেছে?
শ্যাম। ঠাকুরাণীকে কয়েদ করেছে। আর হুকুম দিয়েছে যে, তিন দিন মধ্যে ডাকিনীকে যদি না পাওয়া যায়, তবে সমস্ত রাজ্যের লোকের সমুখে (সেই দেবীকে) উলঙ্গ ক’রে চাঁড়ালের দ্বারা বেত মারিবে।
রাম। হো! হো! হোহো! দেবতার আবার কি কর্বে! রাজা কি পাগল হয়েছে! তা, মা কি কয়েদে গিয়েছেন না কি? তাঁকে কয়েদ করে কার বাপের সাধ্য?
শ্যাম। দেবচরিত্র কার সাধ্য বুঝে! রাজার না কি রাজ্যভোগের নির্দ্দিষ্ট কাল ফুরিয়েছে, তাই মা ছল ধরিয়া, এখন স্বধামে গমনের চেষ্টায় আছেন। রাজা কয়েদের হুকুম দিলেন, মা স্বচ্ছন্দে গজেন্দ্রগমনে কারাগারমধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলেন। শুনিতে পাই, রাত্রে কারাগারে মহাকোলাহল উপস্থিত হয়। যত দেবতারা আসিয়া স্তব পাঠ করেন—ঋষিরা আসিয়া বেদ পাঠ, মন্ত্র পাঠ করেন। পাহারাওয়ালারা বাহির হইতে শুনিতে পায়, কিন্তু দ্বার খুলিলেই সব অন্তর্দ্ধান হয়। (বলা বাহুল্য যে, জয়ন্তী নিজেই রাত্রিকালে ঈশ্বরস্তোত্র পাঠ করেন। পাহারাওয়ালারা তাহাই শুনিতে পায়।)
রাম। তার পর?