পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় খণ্ড—অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ ృళి) সেই বৃহৎ দুর্গপ্রাঙ্গণের মধ্যস্থলে এক উচ্চ মঞ্চ নির্মিত হইয়াছিল। তদুপরি এক • কৃষ্ণকায় বলিষ্ঠগঠন বিকটদৰ্শন চণ্ডাল, মূৰ্ত্তিমান অন্ধকারের স্থায় দীর্ঘ বেত্র হস্তে লইয় দণ্ডায়মান আছে। জয়ন্তীকে তদুপরি আরোহণ করাইয়া সৰ্ব্বসমক্ষে বিবস্ত্রা করিয়া সেই চণ্ডাল বেত্ৰাঘাত করিবে, ইহাই রাজাজ্ঞা । জয়ন্তীকে এখনও সেখানে আনা হয় নাই। রাজা এখনও আসেন নাই—আসিলে তবে তাহাকে আনা হইবে। মঞ্চের সম্মুখে রাজার জন্য সিংহাসন রক্ষিত হইয়াছে। তাহ বেষ্টন করিয়া চোপদার ও সিপাহীগণ দাড়াইয়া আছে। অমাত্যবর্গ আজ সকলেই অনুপস্থিত। এমন কুকাণ্ড দেখিতে আসিতে কাহারও প্রবৃত্তি হয় নাই। রাজাও কাহাকে ডাকেন নাই। কতক্ষণে রাজা আসিবেন, কতক্ষণে সেই দণ্ডনীয় দেবী বা মানবী আসিবে, কতক্ষণে কি হইবে, সেই জন্য প্রত্যাশাপন্ন হইয়া লোকারণ্য উৰ্দ্ধমুখ হইয়াছিল। এমন সময়ে হঠাৎ নকিব ফুকরাইল ; স্তাবকেরা স্তুতিবাদ করিল। দর্শকের জানিল, রাজা আসিতেছেন। রাজার আজ বেশ ভূষার কিছুমাত্র পারিপাট্য নাই—বৈশাখের দিনান্তকালের মেঘের মত রাজা আজ ভয়ঙ্করমূৰ্ত্তি! আয়ত চক্ষু রক্তবর্ণ—বিশাল বক্ষ মধ্যে মধ্যে স্ফীত ও ' উচ্ছসিত হইতেছে। বর্ষণোন্মুখ জলধরের উন্নমনের ন্যায় রাজা আসিয়া সিংহাসনের উপর বসিলেন। কেহ বলিল না, “মহারাজাধিরাজকি জয় ।” তখন সেই লোকারণ্য উৰ্দ্ধমুখ হইয়া ইতস্ততঃ দেখিতে লাগিল—দেখিল, সেই সময়ে প্রহরিগণ জয়ন্তীকে লইয়া মঞ্চোপরি আরোহণ করিতেছে। প্রহরীরা তাহাকে মঞ্চোপরি স্থাপিত করিয়া চলিয়া গেল। কোন প্রাসাদশিখরোপরি উদিত পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় জয়ন্তীর অতুলনীয় রূপরাশি সেই মঞ্চোপরি উদিত হইল। তখন সেই সহস্ৰ সহস্র দর্শক উদ্ধমুখে, উৎক্ষিগুলোচনে গৈরিকবসনাবৃত মঞ্চস্থা অপূৰ্ব্ব জ্যোতিৰ্ম্ময়ী মূৰ্ত্তি নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। সেই উন্নত, সম্পূর্ণায়ত, ললিত মধুর অথচ উজ্জল জ্যোতিবিশিষ্ট দেহ ; তাহার দেবোপম স্থৈৰ্য্য—দেবদুল্লভ শান্তি ; সকলে বিমুগ্ধ হইয়া দেখিতে লাগিল। দেখিল, জয়ন্তীর নবরবিকরপ্রোদ্ভিন্ন পদ্মবৎ অপূৰ্ব্ব প্রফুল্ল মুখ ; এখনও অধরভর মৃদু মৃদু মধুর স্নিগ্ধ বিনম্র হাস্য—সৰ্ব্ববিপসংহারিণী শক্তির পরিচয়স্বরূপ সেই স্নিগ্ধ মধুর মন্দহান্ত ! দেখিয়া, অনেকে দেবতা জ্ঞানে যুক্তকরে প্রণাম করিল। যখন কতকগুলি লোক দেখিল, আর কতকগুলি লোক জয়ন্তীকে প্রণাম করিতেছে—তখন তাহাদের মনে সেই ভক্তিভাব প্রবেশ করিল। তখন তাহার। “জয় মায়িকি জয় ” “জয় লছমী মায়িকি জয় ” ইত্যাদি ঘোররবে জয়ধ্বনি