তৃতীয় খণ্ড—একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ y8 & নন্দার চক্ষুতে বড় ভারি বেগে স্রোত বহিতে লাগিল ; কিন্তু নন্দ তাহ মুছিল। বলিল, “মহারাজ ! আমি যদি ইহাতে নিষেধ করি, তবে আমি তোমার দাসী হইবার যোগ্য নহি । তুমি যে প্রকৃতিস্থ হইয়াছ, ইহাই আমার বহু ভাগ্য—আর যদি ফুদিন আগে হইতে ! তুমিও মরিবে মহারাজ ! আমিও মরিব—তোমার অনুগমন করিব। কিন্তু ভাবিতেছি— এই আপোগণ্ডগুলির কি হইবে । ইহারা যে মুসলমানের হাতে পড়িবে।” এবার নন্দ কাদিয়া ভাসাইয়া দিল । রাজা বলিলেন, “তাই তোমার মরা হইবে না । ইহাদিগের জন্য তোমাকে থাকিতে হইবে।” নন্দ । আমি থাকিলেই বা উহার বাচিবে কি প্রকারে ? রাজা । নন্দ ! এত লোক পলাইল—তুমি পলাইলে না কেন ? তাহা হইলে ইহার রক্ষা পাইত । নন্দ । তোমার মহিষী হইয়া আমি কার সঙ্গে পলাইব মহারাজ ? তোমার পুত্রকস্তা আমি তোমাকে না বলিয়া কাহার হাতে দিব ? পুত্র বল, কন্যা বল, সকলই ধর্মের জন্য। আমার ধৰ্ম্ম তুমি । আমি তোমাকে ফেলিয়া পুত্রকন্যা লইয়া কোথায় যাইব ? রাজা । কিন্তু এখন উপায় ? - নন্দ । এখন আর উপায় নাই। অনাথা দেখিয়া মুসলমান যদি দয়া করে। না করে, জগদীশ্বর যাহা করিবেন, তাহাই হইবে । মহারাজ, রাজার ঔরসে ইহাদের জন্ম । রাজকুলের সম্পদ বিপদ উভয়ই আছে—তজ্জন্য আমার তেমন চিন্তা নাই। পাছে তোমায় কেহ কাপুরুষ বলে, আমার সেই বড় ভাবনা । রাজা। তবে বিধাতা যাহা করিবেন, তাহাই হইবে। ইহজন্মে তোমাদের সঙ্গে এই দেখা । এই বলিয়া আর কোন কথা না কহিয়া, রাজা সজার্থ অস্ত্রগুহে গেলেন। নন্দ৷ বালকবালিকাদিগকে সঙ্গে লইয়া রাজার সঙ্গে অস্ত্রগুহে গেলেন। রাজা রণসজ্জায় আপনাকে বিভূষিত করিতে লাগিলেন, নন্দ বালকবালিকাগুলি লইয়া চক্ষু মুছিতে মুছিতে দেখিতে লাগিল । যোদ্ধ বেশ পরিধান করিয়া, সৰ্ব্বাঙ্গে অস্ত্র বাধিয়া, সীতারাম আবার সীতারামের মত শোভা পাইতে লাগিলেন। তিনি তখন বীরদৰ্পে, মৃত্যুকামনায়, একাকী দুর্গদ্বারাভিমুখে চলিলেন । নন্দ আবার মাটিতে পড়িয়া কঁাদিতে লাগিল ।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।