পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ8br সীতারাম এই প্রস্তাব অতি উত্তম বলিয়া স্বীকার করিয়া সকলেই অনুমোদন করিল। অতি জরা করিয়া সকলে রণসজ্জা করিল—আপন আপন অশ্ব সকল সুসজ্জিত করিল। তখন সকলে সঙ্গীভূত ও অশ্বারাঢ় হইয়া আস্ফালনপূর্বক, অস্ত্রে অস্ত্রে ঝঞ্চনা শব্দ উঠাইয়া, উচ্চৈঃস্বরে ডাকিল, “জয় মহারাজকি জয় । জয় রাজা সীতারামকি জয় ।” সেই জয়ধ্বনি সীতারামের কাণে প্রবেশ করিয়াছিল । 籌 ত্রয়োবিংশতিতম পরিচ্ছেদ যোদ্ধগণ জয়ধ্বনি করিতে করিতে শ্রেণীবদ্ধ হইয়া, যথায় মঞ্চপার্শ্বে সীতারাম, জয়ন্তী ও ঐীর মহাগীতি শুনিতেছিলেন, সেইখানে আসিয়া জয়ধ্বনি করিল। রঘুবীর মিশ্র জিজ্ঞাসা করিল, “মহারাজের কি হুকুম ? আজ্ঞা পাইলে আমরা এই কয় জন নেড়া মুণ্ডকে হাকাইয়া দিই।” সীতারাম বলিলেন, “তোমরা কিয়ৎক্ষণ এইখানে অপেক্ষ কর । আমি আসিতেছি।” o এই বলিয়া রাজা অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিলেন। সিপাহীর ততক্ষণ নিবিষ্টমন৷ হইয়া অবিচলিতচিত্ত এবং অস্বলিত প্রারম্ভ হইয়া সেই সন্ন্যাসিনীদ্বয়ের স্বৰ্গীয় গান শুনিতে লাগিল । যথাকালে রাজা এক দোলা সঙ্গে করিয়া অন্তঃপুর হইতে নির্গত হইলেন । রাজভূত্যেরা সব পলাইয়াছিল বলিয়াছি। কিন্তু দুই চারি জন প্রাচীন পুরাতন ভৃত্য পলায় নাই, তাহাও বলিয়াছি। তাহারাই দোলা বহিয়া আনিতেছিল। দোলার ভিতরে ননদী এবং বালকবালিকাগণ । রাজ সিপাহীদিগের নিকট প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া, তাহাদিগকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া সাজাইয়া, অতি প্রাচীন প্রথানুসারে একটি অতি ক্ষুদ্র সূচীৰ্বাহ রচনা করিলেন। রন্ধ্রমধ্যে নন্দার শিবিক রক্ষা করিয়া, স্বয়ং সূচীমুখে অশ্বারোহণে দণ্ডায়মান হইলেন। তখন তিনি জয়ন্তী ও স্ত্রীকে ডাকিয় বলিলেন, “তোমরা বাহিরে কেন ? সূচীর রন্ধ্রমধ্যে প্রবেশ কর।” জয়ন্তী ও শ্রী হাসিল। বলিল, “আমরা সন্ন্যাসিনী, জীবনে মৃত্যুতে প্রভেদ দেখি না।”