পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সীতারাম

অনাথনাথ! আমি আজ যে দুঃসাহসের কাজ করিব, তুমি ইহাতে সহায় হইও। আমি স্ত্রীলোক—পাপিষ্ঠা। আমা হইতে কি হইবে! তুমি দেখিও ঠাকুর!”

 এই বলিয়া সেখান হইতে ঐ অপসৃতা হইয়া বাটীর বাহিরে গেল। পাঁচকড়ির মা নামে তাহার এক বর্ষীয়সী প্রতিবাসিনী ছিল। ঐ প্রতিবাসিনীর সঙ্গে ইহাদিগের বিলক্ষণ আত্মীয়তা ছিল, সে শ্রীর মার অনেক কাজ কৰ্ম্ম করিয়া দিত। এক্ষণে তাহার নিকটে গিয়া শ্রী চুপি চুপি কি বলিল। পরে দুই জনে রাজপথে নিষ্ক্রান্ত হইয়া, অন্ধকারে গলি ঘুঁজি পার হইয়া অনেক পথ হাটিল। সে দেশে কোট ঘর তত বেশী নয়, কিন্তু এখনকার অপেক্ষা তখন কোটা ঘর অধিক ছিল, মধ্যে মধ্যে একটি একটি বড় বড় অট্টালিকাও পাওয়া যাইত। ঐ দুই জন স্ত্রীলোক আসিয়া, এমনই একটা বড় অট্টালিকার সম্মুখে উপস্থিত হইল। বাড়ীর সম্মুখে দীঘি, দীঘিতে বাঁধা ঘাট। বাঁধা ঘাটের উপর কতকগুলা দ্বারবান্ বসিয়া, কেহ সিদ্ধি ঘুঁটিতেছিল, কেহ টপ্পা গাইতেছিল, কেহ স্বদেশের প্রসঙ্গে চিত্ত সমর্পণ করিতেছিল। তাহাদেরই মধ্যে এক জনকে ডাকিয়া পাঁচকড়ির মা বলিল, “পাড়ে ঠাকুর। ভাণ্ডারীকে ডেকে দাও না?” দ্বারবান্ বলিল, “হাম পাড়ে নেহি, হাম্ মিশর হোতে হেঁ।”

 পাঁচকড়ির মা। তা আমি জানি না, বাছা! পাঁড়ে কিসের বামুন? মিশর যেমন বামুন!

 তখন মিশ্রদেব প্রসন্ন হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোম ভাণ্ডারী লেকে কেয়৷ করোগে?”

 পাচকড়ির মা। কি আর করিব? আমার ঘরে কতকগুলা নাউ কুমড়া তরকারী হয়েছে, তাই বলে যাব যে, কাল গিয়ে যেন কেটে নিয়ে আসে।

 দ্বারবান্। আচ্ছা, সো হাম্ বোলেঙ্গে। তোম্ ঘর্ মে যাও।

 পাঁচকড়ির মা। ঠাকুর, তুমি বলিলে কি আর সে ঠিকানা পাবে কার ঘরে তরকারী হয়েছে?

 দ্বারবান্। আচ্ছা । তোমারি নাম বোল্‌‌কে যাও।


 পাঁচকড়ির মা। যা আবাগির বেটা! তোকে একটা নাউ দিতাম, তা তোর কপালে হলো না।

 দ্বারবান্। আচ্ছা, তোম্ খাড়ি রহো। হাম্ ভাণ্ডারীকে বোলাতে হেঁ।

 তখন মিশ্ৰঠাকুর গুন্ গুন্ করিয়া পিলু ভাঁজিতে ভাঁজিতে অট্টালিকামধ্যে প্রবেশ করিলেন, এবং অচিরাৎ জীবন ভাণ্ডারীকে সংবাদ দিলেন যে, “এক্‌‌ঠো তরকারিওয়ালি