রমা। ভাণ্ডারী মহাশয় কিছু তরকারির প্রত্যাশায় বঞ্চিত হয়েছেন, তাই আমরা ও কথাটাও শুনিয়াছি। সে কে?
সীতা। শ্রী।
রমা। সে কি? শ্রী? কেন আসিয়াছিল?
সীতা। তার একটি ভিক্ষা ছিল।
রমা। ভিক্ষা পাইয়াছে কি?
সীতা। তুমি কি ভিক্ষুককে ফিরাইয়া থাক?
রমা। তবে ভিক্ষা সে পাইয়াছে। কি দিলে?
সীতা। কিছু দিই নাই, দিব স্বীকার করিয়াছি।
রমা। কি দিবে শুনিতে পাই না?
সীতা। এখন না; দ্বার ছাড়।
রমা। সকল কথা ভাঙ্গিয়া না বলিলে, আমি দ্বার ছাড়িব না।
সীতা। তবে শুন, কাজি সাহেব শ্রীর ভাইকে জীয়ন্ত পুঁতিয়া ফেলিবার হুকুম দিয়াছেন। শ্রীর ভিক্ষা, আমি তাহার ভাইকে রক্ষা করি। আমি তাহা স্বীকার করিয়াছি।
রমা। তাই, আমরা আজ গঙ্গাস্নানে যাইব! তুমি আমাদের পাঠাইয়া দিয়া, নির্ব্বিঘ্নে ফৌজদারের ফৌজের সঙ্গে লাঠালাঠি দাঙ্গা করিবে।
সীতা। সে সকল কথায়, মেয়ে মানুষের কাজ কি?
রমা। কাজ কি? কিছুই কাজ নাই। তবে কি না, আমি গঙ্গাস্নানে যাইব না।
এই বলিয়া রমা, ভাল করিয়া দ্বার চাপিয়া বসিল। সীতারাম অনেক মিনতি করিতে লাগিল। রমা বলিল, “তবে আমারও কাছে একটা সত্য কর, দ্বার ছাড়িয়া দিতেছি।”
সীতা। কি বল?
রমা। তুমি বিনা বিবাদ বিসম্বাদে—দাঙ্গা লড়াই না করিয়া শ্রীর ভ্রাতার জন্য যাহা পার, কেবল তাহাই করিবে, ইহা স্বীকার কর।
সীতা। তাতে আমি খুব সম্মত। দাঙ্গা লড়াই, আমার কাজও নয়, ইচ্ছাও নয়। কিন্তু যত্ন সফল হইবে কি না, সন্দেহ।
রমা। হৌক্ না হৌক্—বিনা অস্ত্রে যা হয়, কেবল তাই করিবে, স্বীকার কর।
কিছুক্ষণ ভাবিয়া সীতারাম বলিলেন, “স্বীকার করিলাম।”
রমা প্রসন্নমনে, দ্বার ছাড়িয়া দিল। বলিল, “তবে আমরা গঙ্গাস্নানে যাইব না।”
সীতারাম ভাবিলেন। বলিলেন, “যখন কথা মুখে আনা হইয়াছে, তখন যাওয়াই ভাল।”
রমা বিষণ্ণ হইল, কিন্তু আর কিছু বলিল না। সীতারাম আর কাহাকে কিছু না বলিয়া বাড়ী হইতে বাহির হইয়া গেলেন। আর ফিরিলেন না।