সীতারাম তখন একটু কলাপাতে বাঁকারির কলমে খাজাঞ্চির উপর এক হাজার টাকা ও জীবন ভাণ্ডারীর জন্য চিঠি পাঠাইলেন। রামসেবক তাহা লইয়া গেল। চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কার তখন সীতারামকে বলিলেন, “এক্ষণে তুমি গমন কর। আমি আশীর্ব্বাদ করিতেছি, মঙ্গল হইবে।”
তখন সীতারাম গুরুদেবকে প্রণাম করিয়া প্রস্থান করিলেন। এদিকে অনতিবিলম্বে জীবন ভাণ্ডারী সহস্র রৌপ্য লইয়া আসিয়া তর্কালঙ্কার মহাশয়কে প্রদান করিল। তর্কালঙ্কার বলিলেন, “কেমন জীবন! এ সহরে তোমার মুনিবের যে যে প্রজা, যে যে খাতক আছে, সকলের বাড়ী চেন ত?”
জীবন। আজ্ঞা হাঁ, সব চিনি।
চন্দ্র। আজ রাত্রে সব আমায় দেখাইয়া দিতে পারিবে ত?
জীবন। আজ্ঞা হাঁ, চলুন না। কিন্তু আপনি এত রাত্রে সে সব চাঁড়াল বাগ্দীর বাড়ী গিয়া কি করিবেন?
চন্দ্র। বেটা, তোর সে কথায় কাজ কি? তোর মুনিব আমার কথায় কথা কয় না,—তুই বকিস! আমি যা বলিব, তাই করিবি, কথা কহিবি না ।
জীবন। যে আজ্ঞা, চলুন। এ টাকা কোথায় রাখিব?
চন্দ্র। টাকা সঙ্গে নিয়ে চল্। আমি যা করিব, তা যদি কাহারও সাক্ষাতে প্রকাশ করিস্, তবে তোর শূল-বেদনা ধরিবে—আর তুই শিয়ালের কামড়ে মরিবি।
এখন জীবন ভাণ্ডারী শূল-বেদনা এবং শৃগাল এ উভয়কেই বড় ভয় করিত—সুতরাং সে ব্রহ্মশাপ ভয়ে আর দ্বিরুক্তি করিল না। চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কার তখন পূজার ঘর হইতে এক আঁজলা প্রসাদী ফুল নামাবলীতে লইয়া জীবন ভাণ্ডারী ও সহস্র রৌপ্য সহায় হইয়া বাহির হইলেন। কিয়দ্দুর গিয়া জীবন ভাণ্ডারী একটা বাড়ী দেখাইয়া দিয়া বলিল, “এই এক জন।”
চন্দ্র। এর নাম কি?
জীবন। এর নাম যুধিষ্ঠির মণ্ডল।
চন্দ্র। ডাক তাকে।
তখন জীবন ভাণ্ডারী “মণ্ডলের পো! মণ্ডলের পো!” বলিয়া যুধিষ্ঠিরকে ডাকিল। যুধিষ্ঠির বলিল, “কে গা?”
চন্দ্রচূড় বলিলেন, “কাল গঙ্গারাম দাসের জীয়ন্তে কবর হইবে শুনিয়াছ?”
যুধিষ্ঠির। শুনিয়াছি।
চন্দ্র। দেখিতে যাইবে?
যুধিষ্ঠির। নেড়ের দৌরাত্ম্য, কি হবে ঠাকুর, দেখে?
চন্দ্র। দেখিতে যাইও। লক্ষ্মীনারায়ণজীউর হুকুম। এই হুকুম নাও।
এই বলিয়া তর্কালঙ্কার ঠাকুর একটি প্রসাদী ফুল নামাবলী হইতে লইয়া যুধিষ্ঠিরের হাতে দিলেন। যুধিষ্ঠির তাহা মাথায় ঠেকাইয়া বলিল, “যে আজ্ঞে। যাইব।”