উজ্জ্বল হরিৎ প্রভা প্রতিহত করিতে লাগিল,—ফুলে, ফলে, পাতায়, লতায়, কাণ্ডে, দণ্ডে, উজ্জ্বল জ্বালা কাঁপিতে লাগিল। ক্রমে সব আলো—শেষ ঘোর দাবানল, সব অগ্নিময়, শত সূর্য্য-প্রকাশ! তখন সীতারাম বুঝিলেন, হৃদয়ের সে আলোটা কি? বুঝিলেন, হৃদয়ে সহসা যে প্রভাকর উদিত হইয়াছে, তাহার নাম—
ধর্ম্ম-রাজ্য-স্থাপন!
বুঝিলেন, এই সূর্য্যে সকল অন্ধকার মোচন করিবে।
সীতারাম বুঝিবামাত্র ক্ষিপ্তবৎ হইলেন। প্রতিভা কে হৃদয়ে ধারণ করিয়া, ধৈর্য্য রক্ষা করে! প্রথম উচ্ছ্বাসে তিনি বাহ্বাস্ফোটন করিয়া, বলিলেন, “এই বাহু! ইহাতে কি বল নাই? কে এমন তরবারি ধরিতে পারে? কাহার বন্দুকের এমন লক্ষ্য! কাহার মুষ্টিতে এত জোর!এ রসনায় কি বাগ্দেবীর প্রসাদ নাই? কে লোকের এমন মন হরণ করিতে পারে! আমি কি কৌশল জানি না—”
সহসা যেন সীতারামের মাথায় বজ্রাঘাত হইল। হৃদয়ের আলো একেবারে নিবিয়া গেল! “এ কি বলিতেছি! আমি কি পাগল হইয়াছি! আমি কি করিতেছি! আমি কে! আমি কি! আমি ত একটি ক্ষূদ্র পিপীলিকা—সমুদ্র-তীরের একটি বালি! আমার এত দর্প! এই বুদ্ধিতে সাম্রাজ্যের কথা আমার মনে আসে! ধিক্ মনুষ্যের বুদ্ধিতে!”
তখন সীতারাম কায়মনোবাক্যে জগদীশ্বরে চিত্ত সমর্পণ করিলেন। অনন্ত, অব্যয়, নিখিল জগতের মূলীভূত, সর্ব্বজীবের প্রাণস্বরূপ, সর্ব্বকার্য্যের প্রবর্ত্তক, সর্ব্বকর্ম্মের ফলদাতা, সর্ব্বাদৃষ্টের নিয়ন্তা, তাঁহার শুদ্ধি, জ্যোতি, অনন্ত প্রকৃতি ধ্যান করিতে লাগিলেন। তখন বুঝিলেন, “তিনিই বল! তিনিই বাহুবল! তিনিই ধর্ম্ম! ধর্ম্মচ্যুত যে বাহু-বল, তাহা পরিণামে দুর্ব্বলতা।” সীতারাম তখন বুঝিলেন,
ধর্ম্মই ধর্ম্ম-সাম্রাজ্য সংস্থাপনের উপায়।
সীতারামের হৃদয়, অতিশয় স্নিগ্ধ, সন্তুষ্ট ও শীতল হইল।
তখন প্রান্তর পানে চাহিয়া সীতারাম দেখিলেন, মাঠ অশ্বারোহী মুসলমান-সেনায় ভরিয়া গিয়াছে।
পৃ. ২১, পংক্তি ২২, এই “ষষ্ঠ” পরিচ্ছেদটি প্রথম সংস্করণের “দশম” পরিচ্ছেদ। এই পরিচ্ছেদের পূর্ব্বে প্রথম সংস্করণে আরও তিনটি পরিচ্ছেদ ছিল। নিম্নে সেগুলি মুদ্রিত হইল।—
সপ্তম পরিচ্ছেদ
মুসলমান সেনা নির্গমের পূর্ব্বেই ফৌজদারের হুজুরে সম্বাদ পৌঁছিল যে, বিদ্রোহীরা পলাইয়াছে। অতএব এক্ষণে যুদ্ধার্থে সেনা নির্গত না হইয়া কেবল বিদ্রোহীর ধৃতার্থ অশ্বারোহী সেনাগণ নির্গত হইয়াছিল। বহুসংখ্যক সেনা প্রান্তর মধ্যে উপস্থিত হইয়া, কাহাকেও না দেখিয়া, কেহ গ্রামাভিমূখে, কেহ