সংজ্ঞালক্ষণ নাই দেখিয়া, শেষে চন্দ্রচূড় জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা! তবে তুমি এক্ষণে এখানে বাস কর, আমি এখন যাই।”
শ্রী কোন উত্তর করিল না—কথা তাহার কানে গিয়াছে, এমনও বোধ হইল না। চন্দ্রচূড় অপেক্ষা করিতে লাগিলেন—প্রতিভা কখন ফুটে, কখন নিবে, কখন স্থির, কখন আন্দোলিত, চন্দ্রচূড় তাহাকে চিনিতেন, অতএব ফলাকাঙ্ক্ষায় নীরবে শ্রীর মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন। শেষ দেখিলেন, শ্রী সুস্থিরা, প্রফুল্লমুখী, ভাস্বর কটাক্ষবিশিষ্টা হইল। তখন বুঝিলেন, এবার মেঘ বারিবর্ষণ করিবে—চাতকের তৃষা ভাঙ্গিবে।
শ্রী অল্প ঘোমটা টানিয়া—অল্প সলজ্জ হাসি হাসিয়া বলিল, “ঠাকুর! এখন কি একবার সে মাঠে যাওয়া যায় না?”
চন্দ্র। কেন? সেখানে এখন বিশেষ ভয়—চারি দিকে ফৌজ বেড়াইতেছে।
শ্রী। আমি সেখানে একটা কোন বিশেষ সামগ্রী হারাইয়া আসিয়াছি— আমার না গেলেই নয়। আপনি না হয় এইখানে থাকুন, আমি একা যাইতেছি। কিন্তু আপনি আসিলে ভাল হইত।
চন্দ্র। যে সাহস তোমার আছে, সে সাহস কি আমার নাই? চল, তোমার সঙ্গে যাইব।
তখন, শ্রী আগে আগে, চন্দ্রচূড় পিছে পিছে সেই মাঠে চলিলেন। সেখানে অনেক অশ্বারোহী পদাতিক বিদ্রোহীর অনুসন্ধানে ফিরিতেছিল—এক জন আসিয়া চন্দ্রচূড়কে ধরিল। জিজ্ঞাসা করিল, “তোম্ কোন্ হো?”
চন্দ্র। এই ত দেখিতেছ—ভট্টাচার্য ব্রাহ্মণ। যজমানের বাড়ী পার্ব্বণের শ্রাদ্ধ-তাই গ্রামান্তরে যাইতেছি। কি করিতে হইবে বল—করি।
সিপাহী। আচ্ছা, তোম্ যাও—তোম্কো ছোড়, দেতেহেঁ। যেহি আবরৎ [১] তোমারা কোন্ লগ্তী?
চন্দ্র। না বাপু—ও আমার কেহ হয় না।
এই বলিয়া চন্দ্রচূড় শ্রীর নিকট হইতে সরিয়া দাঁড়াইলেন, জানেন, এখন শ্রীর বুদ্ধিতে চলিতে হইবে।
তখন সিপাহী শ্রীকে জিজ্ঞাসা করিল, “তোম্ কোন্ হো? বোল্কে ঘর যাও। হম্লোগোঁকো হুকুম নেহি হৈ কে আবরৎকে পকড়েঁ। স্রেফ্ এক বেওয়াকো হম্লোগ্ ঢুন্ড্তে হেঁ।”
শ্রী। যে ঐ গাছের উপর দাঁড়াইয়া তোমাদের দুর্দ্দশা করিয়াছিল?
সিপাহী। হাঁ—হাঁ—চন্দী বস্কী নাম হৈ।
শ্রী। চণ্ডী নাম নয়। চণ্ডী নাম হউক—আর যাই নাম হউক—আমিই সেই হতভাগিনী।
সিপাহী। (শিহরিয়া) কিয়া!!!
শ্রী। আমিই সেই হতভাগিনী।
- ↑ হিন্দিতে স্থানবিশেষে য y মত ও ব w মত উচ্চারিত হইবে।