পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সকলে হাসিতে লাগিল। একজন বলিল, “রেওয়াজ যে লোহার ?” সীতা । মাচুর্য কি মিছরির ? না কাদার ? . . . . . . . . ." আর এক জন বলিল, "লোহার কপাট কি হাত দিয়া ভাজিব ? না দাত দিয়া কাটিব ? না নখ निग्रा झेिक्लिद ?” - সকলে হাসিল । সীতারাম বলিলেন, “কেন, পাচ শ লোকের লাথিতে এক জোড়া কপাট কি ভাঙ্গে না ? হোক না কেন লোহা—এক হয়ে কাজ করিলে, লোহার কথা দূরে থাক, পাহাড়ও ভাঙ্গা যায়, সমুদ্রও বাধা যায়। কাঠবিড়ালীতে সমুদ্র বঁাধার কথা শুন নাই ?” - - তখন এক জন বলিল, “লোকটা বলিতেছে মন্দ নয়। তা ভাই, না হয় যেন লোহার কপাটও ভাঙ্গিলাম—বাহিরে যে সিপাহী তাহারা ?” সীতারাম। কয় জন ? সে ব্যক্তি বলিল, “দুই জন চারি জন থাকিতে পারে।” সীতারাম। এই পাচ শ লোকে আর দুই চারি জন সিপাহী মারিতে পারিব না ? অপর এক জন কহিলেন, “তাদের যে হাতিয়ার আছে ? আমরা আঁচড়ে কামড়ে কি করিব ?” সীতারাম বলিলেন, “তখন আমি তোমাদিগকে হাতিয়ার দিব।” “তুমি হাতিয়ার কোথা পাইবে ?" “আমি সীতারাম রায় ।” t শুনিয়া, যাহার, সীতারামের সঙ্গে তর্ক বিতর্ক করিতেছিল, তাহারা একটু কুষ্ঠিত হইয়া সরিয়া বসিল। এক জন বলিল, “বুঝিলাম, আমাদের উদ্ধারের জন্তই আপনি ইহার ভিতর প্রবেশ করিয়াছেন। আপনি যাহা বলিবেন, আমি তাহাই করিব।” যে কয় জনের সঙ্গে সীতারাম কথোপকথন করিতেছিলেন, সকলেরই এই মত হইল। সীতাকুস্থি তখন আর এক স্থানে গিয়া বসিলেন, সেই রকম করিয়া তাহাদের সঙ্গে কথা কহিলেন, সেই রকম করিয়া তাহাদিগকে বশীভূত করিলেন ; তাহারাও যথাসাধ্য সাহায্যে উষ্ঠত, এবং উত্তেজিত হইল। এইরূপে সীতারাম ক্রমে ক্রমে, অসাধারণ বুদ্ধি, অসাধারণ কৌশল, অসাধারণ বাগিতার গুণে সেই বহুসংখ্যক বন্দিবৃন্দকে একমত, উৎসাহিত, এবং প্রাণপাতে পর্য্যস্ত সম্মত করিলেন। তখন সীতারাম সেই সমস্ত বন্দিবৰ্গকে দাড়াইতে বলিলেন । তাহারা দাড়াইল । তখন সীতারাম তাহাদিগকে শ্রেণীবদ্ধ করিয়া সাজাইতে লাগিলেন। দ্বারের সম্মুখে প্রথম সারি, তার পর আর এক সারি— এইরূপ বরাবর ; প্রতি শ্রেণী:মধ্যস্থ ব্যক্তিদিগকে তিন তিন জন করিয়া আবার বিভাগ করিলেন। আবার সেই তিন জনকে এমত করিয়া দাড় করাইলেন যে, দুই জনের মধ্য দিয়া এক জন মচুন্য যাইতে পারে। তাহাতে এইরূপ ফল দাড়াইল যে, অনায়াসে পলক মধ্যে কোন তিন ব্যক্তির পিছনের সারি হইতে তিন জন আগু হইয়া পলক মধ্যে তাহাদের স্থান লইতে পারে—ঠেলাঠেলি হয় না।