আসিল। সীতারাম তাহার সঙ্গে অনেক কথা বাৰ্ত্ত কহিলেন। সীতারাম দেখিলেন, সে ব্যক্তি জ্ঞানী । ফারসী আরবী উত্তম জানে, তাহার উপর সংস্কৃতও উত্তম জানে, এবং হিন্দুধৰ্ম্মবিষয়ক অনেকগুলি গ্রন্থও পড়িয়াছে। দেখিলেন যে, যদিও তাহার বয়স এমন বেশী নয়, তথাপি সংসারে সে মমতাশূন্য বৈরাগী এবং সৰ্ব্বত্র সমদর্শী। তাহার এবম্বিধ চরিত্র দেখিয়া নন্দ রমাও লজ্জা ত্যাগ করিয়া, একটু দূরে বসিয়া তাহার জ্ঞানগর্ত কথা সকল শুনিতে লাগিলেন। বিদায় কালে সীতারাম বলিলেন, “আপনি যে সকল উপদেশ দিলেন, তাহা অতি ন্যায্য । আমরা সাধ্যানুসারে তাহ পালন করিব। কিন্তু আমার ইচ্ছা যে, আমার নূতন রাজধানীতে আপনি বাস করেন। আমি এ উপদেশের রিপরীতাচরণ করিলে, আপনি নিকটে থাকিলে আমাকে সে সকল কথা আবার মনে করিয়া দিতে পরিবেন। আপনার স্যায় জ্ঞানী ব্যক্তি আমার নিকট থাকিলে, আমার রাজ্যের বিশেষ মঙ্গল হইবে।” ফকির। তুমি একটি কথা আমার নিকট স্বীকৃত হইলে, আমিও তোমার কথায় স্বীকৃত হইতে পারি। তুমি রাজধানীর কি নাম দিবে? সীতা । খামপুর নাম আছে—সেই নামই থাকিবে। ফকির। যদি উহার মহম্মদপুর নাম দিতে স্বীকৃত হও, তবে আমিও তোমার কথায় স্বীকৃত হই। সীতা । এ নাম কেন ? ফকির। তাহা হইলে আমি খাতির জমা থাকিব যে, তুমি হিন্দু মুসলমানে সমান দেখিবে। সীতারাম কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া, তাহাতে স্বীকৃত হইলেন। ফকির তখন বলিল, “আমি ফকির, কোন গৃহে বাস করিব না। কিন্তু তোমার নিকটেই থাকিব । যখন যেখানে থাকি, তোমাকে জানাইব । তুমি খুজিলেই আমাকে পাইৰে।" গমন কালে ফকির তিন জনকে আশীৰ্ব্বাদ করিল। সীতারামকে বলিল, “তোমার মনস্কাম সিদ্ধ হউক।” নন্দাকে বলিল, “তুমি মহিষীর উপযুক্ত ; মহিষীর ধৰ্ম্ম পালন করিও। তোমাদের হিন্দু শাস্ত্রে স্বামীর প্রতি যেরূপ আচরণ করার হুকুম আছে, সেইরূপ করিও—তাহাতেই মঙ্গল হইবে।” রমাকে ফকির বলিল, “মা, তোমাকে কিছু ভীরু-স্বভাব বলিয়া বোধ হইতেছে। ফকিরের কথা মনে রাখিও ; কোন বিপদে পড়িলে ভয় করিও না। ভয়ে বড় অমঙ্গল ঘটে ; রাজার মহিষীকে ভয় করিতে নাই।” তার পর তিন জনে গৃহে গমন করিলেন। পৃ. ২৮, পংক্তি ৩-১৩, “ভূষণায় যে হাঙ্গামা-স্থির করিলেন।” এই অংশের পরিবর্তে ছিল— · ফকির তখন চলিয়া গেল । সীতাৰামে নওগুল ইত্যা সমাপন ইনেল আবানি ..
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।