পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম খণ্ড–চতুর্থ পরিচ্ছেদ
১১

 তখন প্রীতমনে ঘোম্‌টা টানিয়া শ্রী প্রস্থান করিল।

 সীতারাম দ্বার অর্গলবদ্ধ করিয়া, ভৃত্যকে আদেশ করিলেন, “আমি যত ক্ষণ না দ্বার খুলি, তত ক্ষণ আমাকে কেহ না ডাকে।” মনে মনে একবার আবার ভাবিলেন, “শ্রী এমন শ্রী? তা ত জানি না। আগে শ্রীর কাজ করিব, তার পর অন্য কথা।” ভাবিলেন, “হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে?”


তৃতীয় পরিচ্ছেদ

 সীতারামের এক গুরুদেব ছিলেন। তিনি ভট্টাচার্য্য অধ্যাপক গোছ মানুষ, তসর নামাবলী পরা, মাথাটি যত্নপূর্ব্বক কেশশূন্য করিয়াছেন, অবশিষ্ট আছে—কেবল এক “রেফ।” কেশাভাবে চন্দনের যথেষ্ট ঘটা,—খুব লম্বা ফোঁটা, আর আর বামুনগিরির সমান সব আছে। তাঁহার নাম চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কার। তিনি সীতারামের নিতান্ত মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী। সীতারাম যখন যেখানে বাস করিতেন, চন্দ্রচূড়ও তখন সেইখানে বাস করিতেন। সম্প্রতি ভূষণায় বাস করিতেছিলেন। আমরা আজিকার দিনেও এমন দুই এক জন অধ্যাপক দেখিয়াছি যে, টোলে ব্যাকরণ সাহিত্য পড়াইতে যেমন পটু, অশাসিত তালুকে দাঙ্গা করিতেও তেমনি মজবুত। চন্দ্রচূড় সেই শ্রেণীর লোক।

 কিছু ক্ষণ পরে গৃহ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সীতারাম গুরুদেবের নিকেতনে উপস্থিত হইলেন। চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে নিভৃতে সীতারামের অনেক কথা হইল। কি কি কথা হইল, তাহা আমাদের সবিস্তারে লিখিবার প্রয়োজন নাই। কথাবার্ত্তার ফল এই হইল যে, সীতারাম ও চন্দ্রচূড় উভয়ে সেই রাত্রিতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া সহরের অনেক লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন, এবং সীতারাম রাত্রিশেষে গৃহে ফিরিয়া আসিয়া আপনার পরিবারবর্গ এক জন আত্মীয় লোকের সঙ্গে মধুমতীপারে পাঠাইয়া দিলেন।


চতুর্থ পরিচ্ছেদ

 এক খুব বড় ফর্‌দা জায়গায়, সহরের বাহিরে, গঙ্গারাম দাসের কবর প্রস্তুত হইয়াছিল। বন্দী সেখানে আসিবার আগেই লোক আসিতে আরম্ভ হইল। অতি প্রত্যূষে,—তখনও—গাছের আশ্রয় হইতে অন্ধকার সরিয়া যায় নাই—অন্ধকারের আশ্রয় হইতে নক্ষত্র সব