পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
সীতারাম

 বন্দেআলি সেখকে এই সকল কথা বলিতে বলিয়া দিয়া, গঙ্গারাম বলিলেন, “লিখিত উত্তর লইয়া আইস।”

 বন্দেআলি বলিল, “আমার কথায় ফৌজদার সাহেব বিশ্বাস করিয়া খত দিবেন কেন?”

 গঙ্গারাম বলিল, “পত্র লিখিতে আমার সাহস হয় না। আমার এই মোহর লইয়া যাও। আমার মোহর তোমার হাতে দেখিলে তিনি অবশ্য বিশ্বাস করিবেন।”

 বন্দেআলি মোহর লইয়া ভূষণায় গেল। ফৌজদারিতে তার চেনা লোক ছিল। ফৌজদারী সরকারে, কারকুন দপ্তরের বখশী চেরাগ আলির সঙ্গে তাহার দোস্তী ছিল। বন্দেআলি চেরাগ আলিকে ধরিল যে, ফৌজদারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া দাও, আমার বিশেষ জরুরী কথা আছে। বখশী গিয়া কারকুনকে ধরিল, কারকুন পেস্কারকে ধরিল, পেস্কার সাক্ষাৎ করাইয়া দিল।

 গঙ্গারাম যেমন যেমন বলিয়া দিয়াছিলেন, বন্দেআলি অবিকল সেই রকম বলিল। লিখিত উত্তর চাহিল। তোরাব খাঁ কিছুক্ষণ চিন্তা করিলেন। বুঝিলেন যে, গঙ্গারাম ত হাতছাড়া হইয়াইছে—এখন তাহাকে মাফ করায় কোন ক্ষতি হইতে পারে না। অতএব

 পৃ. ৬৭, পংক্তি ১৭, “সেও পার হইতেছিল।” এই কথা কয়টির পূর্ব্বে ছিল—
যাহার সঙ্গে পাঠকের মন্দিরে পরিচয় হইয়াছিল,—

 পৃ. ৬৭, পংক্তি ২৪, এই “দশম” পরিচ্ছেদটি প্রথম সংস্করণের “একাদশ” পরিচ্ছেদ।

 পৃ. ৬৮,পংক্তি ২৫-২৭, “গঙ্গারাম অভীষ্ট··· অনুবর্ত্তী হইয়াছিল।” এই অংশের পরিবর্ত্তে ছিল—

 গঙ্গা। নলদী পরগণা আমাকে দিবেন।

 ফৌজদার। মহম্মদপুর আর হিন্দুর হাতে রাখিব না। কিন্তু তুমি যদি চাও, তবে তোমাকে এখানে শিপাহশালার করিতে পারি। আর টাকা ও গ্রাম দিতে পারি।

 গঙ্গারাম। তাহাই যথেষ্ট। কিন্তু আর এক ভিক্ষা আছে। সীতারামের দুই মহিষী আছে।

 ফৌজ। তাহারা নবাবের জন্য। তাহাদের পাইবে না।

 গঙ্গা। জ্যেষ্ঠাকে মুরশিদাবাদে পাঠাইবেন। কনিষ্ঠাকে নফরকে বখশিষ করিবেন।

 ফৌজদার তামাসা করিয়া বলিলেন, “তুমি সীতারামের স্ত্রী নিয়া কি করিবে? সীতারাম যেন মরিল, কিন্তু তবু ত হিন্দুর মাঝে বিধবার বিবাহ নাই। যদি মুসলমান হইতে, তবে বুঝিতাম যে, তুমি রাণীকে নেকা করিতে পারিতে।”

 গঙ্গারাম ভাবিল, এ পরামর্শ মন্দ নহে। যদি নিজে মুসলমান হইয়া, রমাকে ফৌজদারের সাহায্যে মুসলমান করিয়া নেকা করিতে পারে, তবে সীতারাম জীবিত থাকিলে, আর কোন দাবী দাওয়া করিতে পারিবে না। গঙ্গারাম নির্ব্বিঘ্নে রমাকে ভোগ দখল করিতে পারিবে। অতএব ফৌজদারকে বলিল,