“মুসলমান ধৰ্ম্মই সত্য ধৰ্ম্ম, এইরূপ আমি ক্রমে বুঝিতেছি। মুসলমান হইব, আমি এখন স্থির করিয়াছি। কিন্তু রমাকে না পাইলে মুসলমান হইব না।”
ফৌজদার হাসিয়া বলিলেন, “রমা কে? সাঁতারামের কনিষ্ঠ ভাৰ্য্যা? সে নহিলে, যদি তোমার পরকালের গতি না হয়, তবে অবশ্য তুমি যাহাতে তাহাকে পাও, তাহা আমি করিব। সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাক। কিন্তু আর একটা কথা, সীতারামের অনেক ধনদৌলত পোতা আছে না ?”
গঙ্গা । শুনিয়াছি, আছে।
তোরাব খাঁ। তাহা তুমি দেখাইয়া দিবে?
গঙ্গা। কোথায় আছে, তাই আমি জানি না।
তোরাব খাঁ। সন্ধান করিতে পারিবে ?
গঙ্গা । এখন করিতে গেলে লোকে আমায় অবিশ্বাস করিবে।
তোরাব খাঁ আর কিছুই বলিলেন না।
তখন সন্তুষ্ট হইয়া গঙ্গারাম বিদায় হইল। এবং সেই রাত্রেই মহম্মদপুর ফিরিয়া আসিল।
গঙ্গারাম জানিত না যে, চাঁদশাহ ফকির তাহার অনুবর্ত্তী হইয়াছিল। চাঁদশাহ ফকির পরদিন নিভৃতে চন্দ্রচূড়ের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলিল, “আহ্লাদের সম্বাদ আপনাকে দিতে আসিয়াছি। ইসলামের জয় হইবে।”
চন্দ্রচূড় জানিতেন, চাঁদশাহের কাছে হিন্দু মুসলমান এক—সে কোন পক্ষে নহে—ধর্ম্মের পক্ষ এবং সীতারামের পক্ষ। অতএব এ কথার কিছু মৰ্ম্ম বুঝিতে না পারিয়া, জিজ্ঞাসা করিলেন, “ব্যাপার কি?”
চাঁদশাহ। হিন্দুরাও ইসলামের পক্ষ।
চন্দ্রচুড়। কোন কোন হিন্দু বটে।
চাঁদ। আপনারাও।
চন্দ্র। সে কি?
চাঁদ । মনে করুন, নগরপাল গঙ্গারাম দাস।
চন্দ্র। গঙ্গারাম খাটি হিন্দু—রাজার বড় বিশ্বাসী।
চাঁদ। তাই কাল রাত্রে ভূষণায় গিয়া তোরাব খাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া আসিয়াছে।
চন্দ্র। আঁ? না, মিছে কথা ।
চাঁদ। আমি সঙ্গে সঙ্গে গিয়াছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়া আসিয়াছি।
এই বলিয়া চাঁদশাহ সেখান হইতে চলিয়া গেল। চন্দ্রচূড় স্তম্ভিত হইয়া বসিয়া রহিলেন–তাঁহার তেজস্বিনী বুদ্ধি যেন হঠাৎ নিবিয়া গেল।
পৃ. ৬৯, পংক্তি ১, এই “একাদশ" পরিচ্ছেদটি প্রথম সংস্করণের “দ্বাদশ” পরিচ্ছেদ।
পংক্তি ২, “সন্ধ্যার পর গুপ্তচর” এই কথাগুলির পূৰ্ব্বে ছিল—