বৃক্ষারূঢ় ব্যক্তি উপর হইতে বলিল, “না।”
“তবে বোধ হয়, নারায়ণ রক্ষা করিলেন।”
পাঠক বুঝিয়া থাকিবেন যে, এই স্ত্রীলোক শ্রী। বৃক্ষোপরি স্বয়ং চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কার। বৃক্ষশাখা ঠিক তাঁর উপযুক্ত স্থান নহে, কিন্তু তর্কালঙ্কার মনে করিতেছিলেন, “আমি ধর্ম্মাচরণনিযুক্ত, ধর্ম্মের জন্য সকলই কর্ত্তব্য।”
শ্রীর কথার উত্তরে চন্দ্রচূড় বলিলেন, “নারায়ণ অবশ্য রক্ষা করিবেন। আমার সে ভরসা আছে। তুমি উতলা হইও না। কিন্তু এখনও রক্ষার উপায় হয় নাই বোধ হইতেছে। কতকগুলা লালপাগড়ি আসিতেছে, দেখিতে পাইতেছি।”
শ্রী। কিসের লাল পাগড়ি?
চন্দ্রচূড়। বোধ হয় ফৌজদারি সিপাহী।
বাস্তবিক দুই শত ফৌজদারি সিপাহী সশস্ত্র শ্রেণীবদ্ধ হইয়া গঙ্গারামকে ঘেরিয়া লইয়া আসিতেছিল। দেখিয়া সেই অসংখ্য জনতা একেবারে নিস্তব্ধ হইয়া দাঁড়াইল। যেমন যেমন দেখিতে লাগিলেন, চন্দ্রচূড় সেইরূপ শ্রীকে বলিতে লাগিলেন। শ্রী জিজ্ঞাসা করিল, “কত সিপাই?”
চন্দ্র। দুই শত হইবে।
শ্রী। আমরা দীন দুঃখী—নিঃসহায়। আমাদের মারিবার জন্য এত সিপাহী কেন?
চন্দ্র। বোধ হয়, বহুলোকের সমাগম হইয়াছে শুনিয়া, সতর্ক হইয়া ফৌজদার এত সিপাহী পাঠাইয়াছেন।
শ্রী। তার পর কি হইতেছে?
চন্দ্র। সিপাহীরা আসিয়া, শ্রেণী বাঁধিয়া, প্রস্তুত কবরের নিকট দাঁড়াইল। মধ্যে গঙ্গারাম। পিছনে খোদ কাজি, আর সেই ফকির।
শ্রী। দাদা কি করিতেছেন?
চন্দ্র। পাপিষ্ঠেরা তার হাতে হাতকড়ি, পায়ে বেড়ী দিয়াছে।
শ্রী। কাঁদিতেছেন কি?
চন্দ্র। না। নিঃশব্দ—নিস্তব্ধ। মূর্ত্তি বড় গম্ভীর, বড় সুন্দর।
শ্রী। আমি একবার দেখিতে পাই না? জন্মের শোধ দেখিব।
চন্দ্র। দেখিবার সুবিধা আছে। তুমি এই নীচের ডালে উঠিতে পার?
শ্রী। আমি স্ত্রীলোক, গাছে উঠিতে জানি না।