কাজি সাহেব ভাবিলেন। কাজি সাহেবের সে সময়ে সেখানে আসিবার কোন প্রয়োজন ছিল না, কেবল জনতা শুনিয়া শখ করিয়া আসিয়াছিলেন। যখন আসিয়াছিলেন, তখন তিনিই কর্ত্তা। তিনি বলিলেন, “সীতারাম যখন বারণ করিতেছে, তখন কিছু কারণ আছে। সীতারাম আসা পর্য্যন্ত বিলম্ব কর।
শাহ সাহেব অসন্তুষ্ট হইলেন, কিন্তু অগত্যা সীতারাম পৌঁছান পর্য্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইল। গঙ্গারামের মনে একটু আশার সঞ্চার হইল।
সীতারাম কাজি সাহেবের নিকট পৌঁছিলেন। অশ্ব হইতে অবতরণপূর্ব্বক প্রণতমস্তকে শাহ সাহেবকে বিনয়পূর্ব্বক অভিবাদন করিলেন। তৎপরে কাজি সাহেবকে তদ্রূপ করিলেন। কাজি সাহেব জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেমন, রায় সাহেব! আপনার মেজাজ সরীফ্।”
সীতারাম। অলহম্-দল্-ইল্লা। মেজাজে মবারকের সংবাদ পাইলেই এ ক্ষুদ্র প্রাণী চরিতার্থ হয়।
কাজি। খোদা নফরকে যেমন রাখিয়াছেন। এখন এই উমর, বাল সফেদ, কাজা পৌঁছিলেই হয়। দৌলতখানার কুশল সংবাদ ত?
সীতা। হজুরের এক্বালে গরিবখানার অমঙ্গলের সম্ভাবনা কি?
কাজি। এখন এখানে কি মনে করিয়া?
সীতা। এই গঙ্গারাম—বদ্বখ্ত্—বেত্মিজ্ যাই হৌক, আমার স্বজাতি। তাই দুঃখে পড়িয়া হজুরে হাজির হইয়াছি, জান বখ্শিশ্ ফরমায়েস্ করুন।
কাজি। সে কি? তাও কি হয়?
সীতা। মেহেরবান ও কদরদান সব পারে।
কাজি। খোদা মালেক। আমা হইতে এ বিষয়ের কিছু হইবে না।
সীতা। হাজার আসরফি জরমানা দিবে। জান বখ্শিশ্ ফরমায়েস্ করুন।
কাজি সাহেব ফকিরের মুখপানে চাহিলেন। ফকির ঘাড় নাড়িল। কাজি বলিলেন, “সে সব কিছু হইবে না। কবরমে কাফেরকো ডারো।
সীতা। দুই হাজার আসরফি দিব। আমি যোড় হাত করিতেছি, গ্রহণ করুন। আমার খাতির!
কাজি ফকিরের মুখ পানে চাহিল, ফকির নিষেধ করিল, সে কথাও উড়িয়া গেল। শেষ সীতারাম চারি হাজার আসরফি স্বীকার করিল। তাও না। পাঁচ হাজার—তাও না। আট হাজার-দশ হাজার, তাও না। সীতারামের আর নাই। শেষ সীতারাম জানু