পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম খণ্ড-চতুর্থ পরিচ্ছেদ । কাজি সাহেব সীতারামের উপর কিছু প্রসন্ন হইলেন। শাহ সাহেবকে অন্তরালে : লইয়া চুপি চুপি কথাবাৰ্ত্ত কহিতে লাগিলেন। বলিলেন, “এ ব্যক্তি দশ হাজার আসরফি , দিতে চাহিতেছে। নিলে সরকারি তহবিলের কিছু মুসার হইবে। দশ হাজার আসরফি। লইয়া, এই হতভাগ্যকে ছাড়িয়া দিলে হয় না ?” শাহ সাহেব বলিলেন, “আমার ইচ্ছ, ছুইটাকেই এক্ট কবরে পুতি। আপনি কি বলেন ?” কাজি । তোবা! আমি তাহ পারিব না। সীতারাম কোন অপরাধ করে নাই— বিশেষ এ ব্যক্তি মান্ত, গণ্য ও সচ্চরিত্র। তা হইবে না। এতক্ষণ গঙ্গারাম কোন কথা কহে নাই, মনে জানিত যে, তাহার নিস্কৃতি নাই । কিন্তু শাহ সাহেবের সঙ্গে কাজি সাহেবের নিভৃতে কথা হইতেছে দেখিয়া সে যোড় হাত করিয়া কাজি সাহেবকে বলিল, “হজুরের মরজি মবারকে কি হয় বলিতে পারি না, কিন্তু এ গরিবের প্রাণ রক্ষণ সম্বন্ধে গরিবেরও একটা কথা শুনিতে হয়। একের অপরাধে । অন্যের প্রাণ লইবেন, এ কোন সরায় আছে ? সীতারামের প্রাণ লইয়া, আমায় প্রাণদান দিবেন-আমি এমন প্রাণদান লইব না। এই হাতকড়ি মাথায় মারিয়া আপনার মাথা, ফাটাইব ।” তখন ভিড়ের ভিতর হইতে কে ডাকিয়া বলিল, “হাতকড়ি মাথায় মারিয়াই মর। মুসলমানের হাত এড়াইবে।” বক্তা, স্বয়ং চন্দ্রচূড় ঠাকুর। তিনি আর গাছে নাই। এক জন জমাদার শুনিয়া বলিল, “পাকড়ে বস্কো ।” কিন্তু চন্দ্রচূড় তর্কালঙ্কারকে পাকুড়ান বড় শক্ত কথা। সে কাজ হইল না। এ দিকে হাতকড়ি মাথায় মারার কথা শুনিয়া ফকির মহাশয়ের কিছু ভয় হইল, পাছে জীয়ন্ত মানুষ পোতার সুখে তিনি বঞ্চিত হন। কাজি সাহেবকে বলিলেন, “এখন আর উহার হাতকড়িতে প্রয়োজন কি ? হাতকড়ি খসাইতে বলুন।” কাজি সাহেব সেইরূপ হুকুম দিলেন। কামার আসিয়া গঙ্গারামের হাত মুক্ত করিল। কামার সেখানে উপস্থিত থাকিবার প্রয়োজন ছিল না, তবে সরকারি বেড়ি হাতকড়ি সব তাহার জিম্মা, সেই উপলক্ষে সে আসিয়াছিল। তাহার ভিতর কিছু গোপন কথাও ছিল । রাত্রিশেষে কৰ্ম্মকার মহাশয় চন্দ্রচূড় ঠাকুরের কিছু টাকা খাইয়াছিলেন। তখন ফকির বলিল, “আর বিলম্ব কেন ? উহাকে গাড়িয়া ফেলিতে হুকুম দিন।” wo