পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Se সীতারাম দৃপ্ত পদভরে যুগল শাখা তুলিতেছে, উঠিতেছে, নামিতেছে,—সঙ্গে সঙ্গে সেই মধুরিমময় দেহ উঠিতেছে, নামিতেছে—যেন সিংহবাহিনী সিংহপৃষ্ঠে দাড়াইয়া রণরঙ্গে নাচিতেছে। যেন মা অসুর-বধে মত্ত হইয়া ডাকিতেছেন, “মার! মার শত্রু মার!” স্ত্রীর আর লজ্জা নাই, জ্ঞান নাই, ভয় নাই, বিরাম নাই—কেবল ডাকিতেছে—“মার—শত্ৰু মার! দেবতার শক্ৰ, মানুষের শক্র, হিন্দুর শক্ৰ—আমার শক্র—মার! শত্রু মার!” উখিত বাহু, কি সুন্দর বাহু! ক্ষুরিত অধর, বিস্ফারিত নাসা, বিছান্ময় কটাক্ষ, স্বেদাক্ত ললাটে স্বেদবিজড়িত চূর্ণ কুন্তলের শোভা ! সকল হিন্দু সেই দিকে চাহিতেছে, আর “জয় মা চণ্ডিকে ” বলিয়৷ রণে ছুটিতেছে। গঙ্গারাম প্রথমে মনে করিতেছেন যে, যথার্থই চণ্ডী অবতীর্ণ—তার পর সবিস্ময়ে, সভয়ে চিনিলেন, শ্ৰী ! । এই চণ্ডীর উৎসাহে হিন্দুর রণজয় হইল। চণ্ডীর বলে বলবান হিন্দুর বেগ মুসলমানেরা সহ করিতে পারিল না। চীৎকার করিতে করিতে পলাইতে লাগিল। অল্পকালমধ্যে রণক্ষেত্র মুসলমানশূন্ত হইল। গঙ্গারাম তখন দেখিলেন, এক জন ভারী লম্বা যোয়ান সীতারামকে কাধে করিয়া লইয়া, আর সকলে তাহাকে ঘেরিয়া, সেই চণ্ডীর দিকে লইয়া চলিল। আরও দেখিলেন, পশ্চাৎ আর এক জন শড়কীওয়াল শাহ সাহেবের কাটামুণ্ড শড়কীতে বিধিয়া উচু করিয়া সঙ্গে সঙ্গে লইয়া যাইতেছে। এই সময়ে স্ত্রী সহসা বৃক্ষচ্যুত হইয়া ভূতলে পড়িয়া মূচ্ছিতপ্রায় হইল। গঙ্গারামও তখন বৃক্ষ হইতে নামিলেন। পঞ্চম পরিচ্ছেদ এমন সময়ে একটা গোল উঠিল যে, কামান, বন্দুক, গোলা গুলি লইয়া, সসৈন্ত ফৌজদার বিদ্রোহীদিগের দমনার্থ আসিতেছেন। গোলা গুলির কাছে ঢাল শড়কী কি করিবে ? বলা বাহুল্য যে, নিমেষমধ্যে সেই যোয়ানের দল অদৃশ্য হইল। যে নিরস্ত্র বীরপুরুষেরা তাহদের আশ্রয়ে থাকিয়া লড়াই ফতে করিতেছি বলিয়া কোলাহল করিতেছিলেন, তাহারা বলিলেন, “আমরা ত বারণ করিয়াছিলাম!” এই বলিয়া আর পশ্চাদৃষ্টি না করিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে গৃহাভিমুখে ধাবিত হইলেন। যাহারা দাঙ্গার কোন সংস্রবে ছিল না, তাহারা ‘চোরা গোরুর অপরাধে কপিলার বন্ধন সম্ভাবনা দেখিয়া সীতারাম গঙ্গারামকে নানাবিধ গালিগালাজ করিয়া আৰ্ত্তনাদপূর্বক পলাইতে লাগিল। অতি অল্পকালমধ্যে সেই