শ্রী। সেখানে কে আছে?—এখন সেখানে আমাকে কে রক্ষা করিবে?
সীতা। তবে তুমি কোথায় যাইতে ইচ্ছা কর?
শ্রী। কোথাও নয়।
সীতা। এইখানে থাকিবে? এ যে মাঠ। এখানে তোমার মঙ্গল নাই।
শ্রী। কেন, এখানে আমার কে কি করিবে?
সীতা। তুমি হাঙ্গামায় ছিলে—ফৌজদার তোমায় ফাঁসি দিতে পারে, মারিয়া ফেলিতে পারে বা সেই রকম আর কোন সাজা দিতে পারে।
শ্রী। ভাল।
সীতা। আমি শ্যামপুরে যাইতেছি। তোমার ভাইও সেইখানে যাইবে। সেখানে তাহার ঘর দ্বার হইবার সম্ভাবনা। তুমি সেইখানে যাও। সেখানে বা যেখানে তোমার অভিলাষ, সেইখানে বাস করিও।
শ্রী। সেখানে কার সঙ্গে যাইব?
সীতা। আমি কোন লোক তোমার সঙ্গে দিব।
শ্রী। এমন লোক কাহাকে সঙ্গে দিবে যে, দুরন্ত সিপাহীদিগের হাত হইতে আমাকে রক্ষা করিবে?
সীতারাম কিছুক্ষণ ভাবিলেন; বলিলেন, “চল, আমি তোমাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেছি।”
শ্রী সহসা উঠিয়া বসিল। উন্মুখী হইয়া স্থিরনেত্রে সীতারামের মুখপানে কিছুক্ষণ নীরবে চাহিয়া রহিল। শেষে বলিল, “এত দিন পরে, এ কথা কেন? ”
সীতা। সে কথা বুঝান বড় দায়। নাই বুঝিলে?
শ্রী। না বুঝিলে আমি তোমার সঙ্গে যাইব না। যখন তুমি ত্যাগ করিয়াছ, তখন আর আমি তোমার সঙ্গে যাইব কেন? যাইব বই কি? কিন্তু তুমি দয়া করিয়া আমাকে কেবল প্রাণে বাঁচাইবার জন্য যে, এক দিন আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইবে, আমি সে দয়া চাহি না। আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী, তোমার সর্ব্বস্বের অধিকারিণী,—আমি তোমার শুধু দয়া লইব কেন? যাহার আর কিছুতেই অধিকার নাই, সেই দয়া চায়। না প্রভু, তুমি যাও, আমি যাইব না। এত কাল তোমা বিনা যদি আমার কাটিয়াছে, তবে আজিও কাটিবে।
সীতা। এসো, কথাটা আমি বুঝাইয়া দিব।