প্রথম খণ্ড–অষ্টম পরিচ্ছেদ । så ঐ। এখন তিনি স্বর্গে গিয়াছেন বলিয়া কি তুমি আর তাহার অধীন নও? ৷ সীতা । পিতার আজ্ঞা সকল সময়েই পালনীয়—তিনি যখন আছেন, তখনও পালনীয়—তিনি যখন স্বর্গে, তখনও পালনীয়। কিন্তু পিতা যদি অধৰ্ম্ম করিতে বলেন, তবে তাহা কি পালনীয় ? পিতা মাতা বা গুরুর আজ্ঞাতেও অধৰ্ম্ম করা যায় না—কেন না, যিনি পিতা মাতার পিতা মাতা এবং গুরুর গুরু, অধৰ্ম্ম করিলে তাহার বিধি লঙ্ঘন করা হয় । বিনাপরাধে স্ত্রীত্যাগ ঘোরতর অধৰ্ম্ম—অতএব আমি পিতৃ-আজ্ঞা পালন করিয়া অধৰ্ম্ম করিতেছি—শীঘ্রই আমি তোমাকে এ কথা জানাইতাম, কিন্তু— শ্ৰী আবার দাড়াইয়া উঠিল। বলিল, “আমাকে পরিত্যাগ করিয়াও যে তুমি আমাকে এত দয়া করিয়াছ, আমার ভাইয়ের প্রাণভিক্ষা দিয়াছ, ইহা তোমার আশেষ গুণ । আর কখনও আমি তোমাকে মুখ দেখাইব না বা তুমি কখনও আমার নামও শুনিবে না। গণকঠাকুর যাই বলুন, স্বামী ভিন্ন স্ত্রীলোকের আর কেহই প্রিয় নহে। সহবাস থাকুক বা না থাকুক, স্বামীই স্ত্রীর প্রিয়। তুমি আমার চিরপ্রিয়—এ কথা লুকান আমার আর উচিত নহে । আমি এখন হইতে তোমার শত যোজন তফাতে থাকিব ।” এই বলিয়া, শ্ৰী ফিরিয়া না চাহিয়া, সেখান হইতে চলিয়া গেল। অন্ধকারে সে কোথায় মিশাইল, সীতারাম আর দেখিতে পাইলেন না । । অষ্টম পরিচ্ছেদ তা, কথাটা কি আজ সীতারামের নূতন মনে হইল ? না। কাল ঐকে দেখিয়া মনে হইয়াছিল। কাল কি প্রথম মনে হইল ? হুঁ, তা বৈ কি। সীতারামের সঙ্গে শ্রীর কতটুকু পরিচয় ? বিবাহের পর কয়দিন দেখা—সে দেখাই নয়—শ্ৰী তখন বড় বালিকা । তার পর সীতারাম ক্রমশঃ দুই বিবাহ করিয়াছিলেন। তপ্তকাঞ্চনশ্যামাঙ্গী নন্দাকে বিবাহ করিয়াও বুঝি শ্রীর খেদ মিটে নাই—তাই তার পিতা আবার হিমরাশিপ্রতিফলিত-কৌমুদীরূপিণী রমার সঙ্গে পুত্রের বিবাহ দিয়াছিলেন। আজ এক জন বসন্তনিকুঞ্জপ্রহ্নাদিনী অপূর্ণ কল্লোলিনী ; আর এক জন বর্ষা-বারিরাশিপ্রমথিত পরিপূর্ণ স্রোতস্বতী। দুই স্রোতে শ্ৰী ভাসিয়া গেল। তার পর আর শ্রীর কোন খবরই নাই । স্বীকার করি, তবু শ্রীকে মনে করা সীতারামের উচিত ছিল। কিন্তু এমন অনেক উচিত কাজ আছে যে, কাহারও মনে হয় না। মনে হইবার একটা কারণ না ঘটিলে, মনে 8
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।