দিল। শব্দ লক্ষ্য করিয়া সীতারাম সেই দিকে যান—আবার স্ত্র বলিয়া ডাকেন, আবার " অন্য দিকে প্রতিধ্বনি হয়—আবার সীতারাম সেই দিকে ছুটেন—কই, ঐ কোথাও নাই ! হায় ঐ ! হায় জী হায় ঐ! করিতে করিতে রাত্রি প্রভাত হইল—ঐ মিলিল না। কই, যাকে ডাকি, তা ত পাই না। যা খুজি, তা ত পাই না। যা পাইয়াছিলাম, হেলায় হারাইয়াছি, তা ত আর পাই না। রত্ব হারায়, কিন্তু হারাইলে আর পাওয়া যায় না কেন ? সময়ে খুজিলে হয় ত পাইতাম—এখন আর খুজিয়া পাই না। মনে হয়, বুঝি চক্ষু গিয়াছে, বুঝি পৃথিবী বড় অন্ধকার হইয়াছে, বুঝি খুজিতে জানি না। তা কি করিব,—আরও খুজি। যাহাকে ইহজগতে খুজিয়া পাইলাম না, ইহজীবনে সেই প্রিয়। এই নিশা প্রভাতকালে ঐ, সীতারামের হৃদয়ে প্রিয়ার উপর বড় প্রিয়া, হৃদয়ের অধিকারিণী। শ্রীর অনুপম রূপমাধুরী, তাহার হৃদয়ে তরঙ্গে তরঙ্গে ভাসিয়া উঠিতে লাগিল। শ্রীর গুণ এখন তাহার হৃদয়ে জাগরূক হইতে লাগিল। যে বৃক্ষারূঢ় মহিষমৰ্দ্দিনী অঞ্চলসঙ্কেতে সৈন্তসঞ্চালন করিয়া রণজয় করিয়াছিল, যদি সেই ঐ সহায় হয়, তবে সীতারাম কি না করিতে পারেন ? সহসা সীতারামের মনে এক ভরসা হইল। শ্রীর ভাই গঙ্গারামকে শ্যামপুরে তিনি যাইতে আদেশ করিয়াছিলেন, গঙ্গারাম অবশ্ব স্যামপুরে গিয়াছে। সীতারাম তখন ' দ্রুতবেগে শ্যামপুরের অভিমুখে চলিলেন। শ্যামপুরে পৌঁছিয়া দেখিলেন যে, গঙ্গারাম তাহার প্রতীক্ষা করিতেছে। প্রথমেই সীতারাম তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গঙ্গারাম । তোমার ভগিনী কোথায়?” গঙ্গারাম বিস্মিত হইয়৷ উত্তর করিল, “আমি কি জানি!” সীতারাম বিষন্ন হইয়া বলিলেন, “সব গোল হইয়াছে। সে এখানে আসে নাই ?” গঙ্গা । না । সীতা । তুমি এইক্ষণেই তাহার সন্ধানে যাও। সন্ধানের শেষ না করিয়া ফিরিও না। আমি এইখানেই আছি। তুমি সাহস করিয়া সকল স্থানে যাইতে না পার, লোক নিযুক্ত করিও। সে জন্য টাকা কড়ি যাহা আবশ্বক হয়, আমি দিতেছি। গঙ্গারাম প্রয়োজনীয় অর্থ লইয়া ভগিনীর সন্ধানে গেল। বহু যত্বপূর্বক, এক সপ্তাহ র্তাহার সন্ধান করিল। কোন সন্ধান পাইল না। নিস্ফল হইয়া ফিরিয়া আসিয়া সীতারামের নিকট সবিশেষ নিবেদিত হইল।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।