পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চীৎকার রাত্রিদিন কানে শুনিতে লাগিল। রম সীতারামকে পীড়াপীড়ি করিয়া ধরিল যে, । ফৌজদারের পায়ে গিয়া কাদিয়া পড়—মুসলমান দয়া করিয়া ক্ষমা করিবে। সীতারাম সে । কথায় কাণ দিলেন না—রমাও আহার নিজা ত্যাগ করিল। সীতারাম বুঝাইলেন যে, তিনি মুসলমানের কাছে কোন অপরাধ করেন নাই—রম তত বুঝিতে পারিল না। শ্রাবণ মাসের মত, রাত্রিদিন রমার চক্ষুতে জলধারা বহিতে লাগিল। বিরক্ত হইয়া সীতারাম আর তত রমার দিকে আসিতেন না। কাজেই জ্যেষ্ঠ ( ক্রকে গণিয়া মধ্যমা ) পত্নী নন্দার একাদশে বৃহস্পতি লাগিয়া গেল । দেখিয়া, বালিকাবুদ্ধি রম আরও পাকা রকম বুঝিল যে, মুসলমানের সঙ্গে এই বিবাদে, তাহার ক্রমে সৰ্ব্বনাশ হইবে । অতএব রম উঠিয়া পড়িয়া সীতারামের পিছনে লাগিল । কাদাকাটি, হাতে ধরা, পায় পড়া, মাথা খোড়ার জালায় রমা যে অঞ্চলে থাকিত, সীতারাম আর সে প্রদেশ মাড়াইতেন না। তখন রম, যে পথে তিনি নন্দার কাছে যাইতেন, সেই পথে লুকাইয়া থাকিত; সুবিধা পাইলে সহসা তাহাকে আক্রমণ করিয়া ধরিয়া লইয়া যাইত ; তার পর—সেই কাদাকাটি, হাতে ধরা, পায়ে পড়া, মাথা খোড়া—ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান—কখনও মুঘলের ধার, কখনও ইলসে গুড়ুনি, কখনও কালবৈশাখী, কখনও কাৰ্ত্তিকে ঝড়। ধুয়োটা সেই এক—মুসলমানের পায়ে কাদিয়া গিয়া পড়–নহিলে কি বিপদ ঘটিবে ! সীতারামের হাড় জালাতন হইয়া উঠিল। তার পর যখন রমা দেখিল, মহম্মদপুর ভূষণার অপেক্ষ জনাকীর্ণ রাজধানী হইয়া উঠিল, তাহার গড়খাই, প্রাচীর, পরিখা, তাহার উপর কামান সাজান, সেলেখানা গোলাগুলি কামান বন্দুক নানা অস্ত্রে পরিপূর্ণ, দলে দলে সিপাহী কাওয়াজ করিতেছে, তখন রম একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িয়া, বিছনা লইল । যখন একবার পুজাহ্নিকের জন্য শয্যা হইতে উঠিত, তখন রম ইষ্টদেবের নিকট নিত্য যুক্তকরে প্রার্থনা করিত—“হে ঠাকুর । মহম্মদপুর ছারেখারে যাকৃ—আমরা আবার মুসলমানের অনুগত হইয়া নির্বিবয়ে দিনপাত করি। এ মহাভয় হইতে আমাদের উদ্ধার কর।” সীতারামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইলে তাহার সম্মুখেই রম, দেবতার কাছে সেই কামনা করিত। বলা বাহুল্য, রমার এই বিরক্তিকর আচরণে সে সীতারামের চক্ষুশূল হইয়া উঠিল। তখন সীতারাম মনে মনে বলিতেন, “হায় ! এ দিনে যদি ঐ আমার সহায় হইত ” শ্ৰী রাত্রিদিন তাহার মনে জাগিতেছিল। স্ত্রীর স্মরণপটস্থ। মূৰ্ত্তির কাছে নন্দাও নয়, রমাও নয়। কিন্তু মনের কথা জানিতে পারিলে রম, কি নন্দ পাছে মনে ব্যথা পায়, এজন্য