প্রথম খণ্ড—একাদশ পরিচ্ছেদ ৩৫ জী। যন্ত্রণ বোধ হয় তুই পারেই আছে। সন্ন্যাসিনী। ন, মা, যন্ত্রণ সব এই পারেই। ওপারে যে যন্ত্রণার কথা শুনিতে পাও, সে আমরা এই পার হইতে সঙ্গে করিয়া লইয়। যাই। আমাদের এ জন্মের সঞ্চিত পাপগুলি আমরা গাটরি বাধিয়া, বৈতরণীর সেই ক্ষেয়ারীর ক্ষেয়ায় বোৰাই দিয়া, বিনা কড়িতে পার করিয়া লইয়া যাই। পরে যমালয়ে গিয়া গীটার খুলিয়া ধীরে স্বন্থে সেই ৷ ঐশ্বৰ্য্য এক এক ভোগ করি। । ' ' ' স্ত্রী। তা, মা, বোঝাটা এ পারে রাখিয়া যাইবার কোন উপায় আছে কি? থাকে । ত আমায় বলিয়া দাও, আমি শীঘ্র শীঘ্র উহার বিলি করিয়া বেলায় বেলায় পার হইয়া চলিয়া যাই, রাত করিবার দরকার দেখি না— সন্ন্যাসিনী। এত তাড়াতাড়ি কেন মা ? এখনও তোমার সকাল বেলা । শ্ৰী। বেলা হ’লে বাতাস উঠিবে। সন্ন্যাসিনীর আজিও তুফানের বেলা হয় নাই—বয়সটা র্কাচ রকমের। তাই শ্ৰী এই রকমের কথা কহিতে সাহস করিতেছিল। সন্ন্যাসিনীও সেই রকম উত্তর দিল, “তুফানের ভয় কর মা ! কেন তোমার কি তেমন পাক মাঝি নাই ?” ঐ। পাকা মাঝি আছে, কিন্তু তার নৌকায় উঠিলাম না। কেন তার নৌকা ভারি করিব ? সন্ন্যাসিনী। তাই কি খুজিয়া খুজিয়া বৈতরণী-তীরে আসিয়া বসিয়া আছ ? শ্ৰী। আরও পাকা মাঝির সন্ধানে যাইতেছি। শুনিয়াছি, শ্ৰীক্ষেত্রে যিনি বিরাজ করেন, তিনিই না কি পারের কাণ্ডারী। সন্ন্যাসিনী। আমিও সেই কাণ্ডারী খুজিতে যাইতেছি। চল না, দুই জনে একত্রে যাই। কিন্তু আজ তুমি এক কেন ? সে দিন সুবর্ণরেখাতীরে তোমাকে দেখিয়াছিলাম, তখন তোমার সঙ্গে অনেক লোক ছিল—আজ এক কেন ? শ্ৰী। আমার কেহ নাই। অর্থাৎ আমার অনেক আছে, কিন্তু আমি ইচ্ছাক্রমে সৰ্ব্বত্যাগী। আমি এক যাত্রীর দলে যুটিয়া ঐক্ষেত্রে যাইতেছিলাম, কিন্তু যে যাত্রাওয়ালার (পাণ্ডা ) সঙ্গে আমরা যাইতেছিলাম, তিনি আমার প্রতি কিছু কৃপাদৃষ্টি করার লক্ষণ দেখিলাম। কিছু দৌরাত্ম্যের সম্ভাবনা বিবেচনা করিয়া কালি রাত্রিতে যাত্রীর দল হইতে সরিয়া পড়িয়াছিলাম। . সন্ন্যাসিনী। এখন !
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।