ঐ। এখন, বৈতরণী-তীরে আসিয়া ভাবিতেছি, ছুইবার পারে কাজ নাই। একবারই ভাল। জল যথেষ্ট আছে। সন্ন্যাসিনী। সে কথাটা না হয়, তোমায় আমায় দুই দিন বিচার করিয়া দেখা যাইবে । তার পর বিচারে যাহা স্থির হয়, তাহাই করিও। বৈতরণী ত তোমার ভয়ে পলাইবে না । কেমন, আমার সঙ্গে আসিবে কি ? wo স্ত্রীর মন টলিল। শ্রীর এক পয়সা পুজি নাই। দল ছাড়িয়া আসিয়া অবধি আহার হয় নাই ; শ্ৰী দেখিতেছিল, ভিক্ষা এবং মৃত্যু, এই জুই ভিন্ন উপায়াস্তুর নাই। এই সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে যেন উপায়ান্তর হইতে পারে বোধ হইল, কিন্তু তাহাতেও সন্দেহ উপস্থিত হইল। জিজ্ঞাসা করিল, “একটা কথা জিজ্ঞাসা করিব মা ? তুমি দিনপাত কর কিসে ?” সন্ন্যাসিনী। ভিক্ষায় । ঐ । আমি তাহ পারিব না—বৈতরণী তাহার অপেক্ষ সহজ বোধ হইতেছিল। সন্ন্যাসিনী। তাহা তোমায় করিতে হইবে না—আমি তোমার হইয়া ভিক্ষা করিব। শ্ৰী। বাছ, তোমার এই বয়স—তুমি আমার অপেক্ষা ছোট বৈ বড় হইবে না। তোমার এই রূপের রাশি— সন্ন্যাসিনী অতিশয় সুন্দরী—বুঝি শ্রীর অপেক্ষাও সুন্দরী। কিন্তু রূপ ঢাকিবার জন্য আচ্ছা করিয়া বিভূতি মাখিয়াছিল। তাহতে হিতে বিপরীত হইয়াছিল—ঘস ফানুষের ভিতর আলোর মত রূপের আগুন আরও উজ্জল হইয়া উঠিয়াছিল। . স্ত্রর কথার উত্তরে সন্ন্যাসিনী বলিল, “আমরা উদাসীন, সংসারত্যাগী, আমাদের কিছুতেই কোন ভয় নাই। ধৰ্ম্ম আমাদের রক্ষা করেন।” স্ত্রী। তা যেন হইল। তুমি সন্ন্যাসিনী বলিয়া নির্ভয়। কিন্তু আমি বেলপাতের পোকার মত, তোমার সঙ্গে বেড়াইব কি প্রকারে ? তুমিই বা লোকের কাছে এ পোকার কি পরিচয় দিবে ? বলিবে কি যে, উড়িয়া আসিয়া গায়ে পড়িয়াছে ? সন্ন্যাসিনী হাসিল—ফুল্লাধরে মধুর হাসিতে বিছান্দীপ্ত মেঘাবৃত আকাশের স্যায়, সেই ভস্মাবৃত রূপমাধুরী প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। সন্ন্যাসিনী বলিল, “তুমিও কেন বাছা এই বেশ গ্রহণ কর না ?” ঐ শিহরিয়া উঠিল,—বলিল, “সে কি ? আমি সন্ন্যাসিনী হইবার কে ?” সন্ন্যাসিনী। আমি তাহা হইতে বলিতেছি না। তুমি যখন সৰ্ব্বত্যাগী হইয়াছ বলিতেছ, তখন তোমার চিত্তে যদি পাপ না থাকে, তবে হইলেই বা দোষ কি ? কিন্তু এখন
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।