সে কথা থাক—এখন তা বলিতেছি না। এখন এই বেশ ছদ্মবেশস্বরূপ গ্রহণ কর না—তাতে দোষ কি?
শ্রী। মাথা মুড়াইতে হইবে? আমি সধবা।
সন্ন্যাসিনী। আমি মাথা মুড়াই নাই দেখিতেছ।
শ্রী। জটা ধারণ করিয়াছ?
সন্ন্যাসিনী। না, তাও করি নাই। তবে চুলগুলাতে কখনও তেল দিই না, ছাই মাখিয়া রাখি, তাই কিছু জট পড়িয়া থাকিবে।
শ্রী। চুলগুলি যেরূপ কুণ্ডলী করিয়া ফণা ধরিয়া আছে, আমার ইচ্ছা করিতেছে, একবার তেল দিয়া আঁচড়াইয়া বাঁধিয়া দিই।
সন্ন্যা। জন্মান্তরে হইবে,—যদি মানবদেহ পাই। এখন তোমায় সন্ন্যাসিনী সাজাইব কি?
শ্রী। কেবল চুলে ছাই মাখিলেই কি সাজ হইবে?
সন্ন্যা। না—গৈরিক, রুদ্রাক্ষ, বিভূতি, সব আমার এই রাঙ্গা ঝুলিতে আছে। সব দিব।
শ্রী কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিয়া সম্মত হইল। তখন নিভৃত এক বৃক্ষতলে বসিয়া সেই রূপসী সন্ন্যাসিনী শ্রীকে আর এক রূপসী সন্ন্যাসিনী সাজাইল। কেশদামে ভস্ম মাখাইল, অঙ্গে গৈরিক পরাইল, কণ্ঠে ও বাহুতে রুদ্রাক্ষ পরাইল, সর্ব্বাঙ্গে বিভূতি লেপন করিল, পরে রঙ্গের দিকে মন দিয়া শ্রীর কপালে একটি চন্দনের টিপ দিয়া দিল। তখন ভুবনবিজয়াভিলাষী মধুমন্মথের ন্যায় দুই জনে যাত্রা করিয়া, বৈতরণী পার হইয়া, সে দিন এক দেবমন্দিরের অতিথিশালায় রাত্রি যাপন করিল।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
পরদিন প্রাতে উঠিয়া, খরস্রোতা[১] জলে যথাবিধি স্নানাহ্নিক সমাপন করিয়া শ্রী ও সন্ন্যাসিনী, বিভূতি রুদ্রাক্ষাদি-শোভিতা হইয়া পুনরপি, “সঞ্চারিণী দীপশিখা” দ্বয়ের ন্যায় শ্রীক্ষেত্রের পথ আলো করিয়া চলিল। তৎপ্রদেশবাসীরা সর্ব্বদাই নানাবিধ যাত্রীকে সেই
- ↑ নদীর নাম।