e/• মিথ্যা কথা বলা হয় না। কিন্তু যে বলে যে, বাঙ্গালীর চিরকাল এই চরিত্র, চিরকাল দুৰ্ব্বল, চিরকাল ভীরু, স্ত্রীস্বভাব, তাহার মাথায় বজ্ৰাঘাত হউক, তাহার কথা মিথ্যা।” বাঙ্গালীর চিরদুৰ্ব্বলতা এবং চিরভীরুতার আমরা কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাই নাই । কিন্তু বাঙ্গালী যে পূৰ্ব্বকালে বাহুবলশালী, তেজস্বী, বিজয়ী ছিল, তাহার অনেক প্রমাণ পাই।. —“বাঙ্গালার কলঙ্ক"–"প্রচার, শ্রাবণ ১২৯১, পৃ. ৬-৮ * এই প্রমাণের উপরেই বঙ্কিমচন্দ্র সীতারাম-চরিত্রের পরিকল্পনা করিয়াছেন ; মেনাহাতীও নিতান্ত র্তাহার মানস পুত্র নন। এই গেল এক দিক। অন্য দিকে “হিন্দুধৰ্ম্ম”। প্রথম সংখ্যা প্রচারে'র এই দ্বিতীয় প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র লিখিলেন— .জাতীয় ধর্মের পুনর্জীবন ব্যতীত ভারতবর্ষের মঙ্গল নাই, ইহা আমাদিগের দৃঢ় বিশ্বাস ।...এক্ষণে আমাদিগের কি করা কর্তব্য ? দুইটি মাত্র পথ আছে। এক, হিন্দুধৰ্ম্ম একেবারে পরিত্যাগ করা, আর এক হিন্দুধৰ্ম্মের সার ভাগ অর্থাৎ যেটুকু লইয়া সমাজ চলিতে পারে, এবং চলিলে সমাজ উন্নত হইতে পারে, তাহাই অবলম্বন করা । হিন্দুধৰ্ম্ম একেবারে পরিত্যাগ করা আমরা ঘোরতর অনিষ্টকর মনে করি .যে সমাজ ধৰ্ম্মশূন্ত, তাহার উন্নতি দূরে থাকুক, বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। আর তাহারা যদি বলেন যে, হিন্দুধর্মের পরিবর্তে ধৰ্ম্মান্তরকে সমাজ আশ্রয় করুক, তাহা হইলে আমরা জিজ্ঞাসা করি যে, কোন ধৰ্ম্মকে আশ্রয় করিতে হইবে ? পৃথিবীতে আর যে কয়টি শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম আছে, বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম, ইসলাম ধৰ্ম্ম এবং খৃষ্ট ধৰ্ম্ম, এই তিন ধৰ্ম্মই ভারতবর্ষে হিন্দুধৰ্ম্মকে স্থানচ্যুত করিতে পারে নাই।..কতকগুলা বন্যজাতি এবং হিন্দুনামধারী কতকগুলা অনাৰ্য্য জাতিকে অধিকৃত করিয়াছে বটে, কিন্তু ভারতীয় প্রকৃত আর্য্যসমাজের কোন অংশ বিচলিত করিতে পারে নাই । .. যখন ধৰ্ম্মশূন্ত সমাজের বিনাশ নিশ্চিত, যদি হিন্দুধর্শের স্থান অধিকার করিবার শক্তি আর কোন ধর্মেরই নাই, তখন হিন্দুধৰ্ম্ম রক্ষা ভিন্ন হিন্দু সমাজের আর কি গতি আছে ?. ...যাহাতে মকুষ্যের যথার্থ উন্নতি, শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সৰ্ব্ববিধ উন্নতি হয় ; তাহাই ধৰ্ম্ম ।’’এইরূপ উন্নতিকর তত্ত্ব সকল, সকল ধৰ্ম্মাপেক্ষ হিন্দুধৰ্ম্মেই প্রবল। হিন্দুধৰ্ম্মেই তাহার প্রকৃত সম্পূর্ণতা আছে।. “হিন্দুধৰ্ম্ম”—‘প্রচার, শ্রাবণ ১২৯১, পৃ. ১৫-২২ হিন্দুধর্মের প্রতি এই বিশ্বাস এবং আস্থা লইয়া সীতারামের সূত্রপাত। “হিন্দুধৰ্ম্ম রক্ষা ভিন্ন হিন্দু সমাজের আর কি গতি আছে ?” এই মন্তব্য সপ্রমাণ করিবার জন্যই
- বিবিধ প্রবন্ধ—দ্বিতীয় ভাগ, পরিষং সংস্করণ, পৃ. ৩১৪-১৫