চতুর্দশ পরিচ্ছেদ আবার সেই যুগল সন্ন্যাসিনীমূৰ্ত্তি উড়িষ্যার রাজপথ আলো করিয়া পুরুষোত্তমাভিমুখে চলিল। উড়িয়ারা পথে সারি দিয়া দাড়াইয়া হা করিয়া দেখিতে লাগিল। কেহ আসিয়া তাহাদের পায়ের কাছে লম্বা হইয়া শুইয়া পড়িয়া বলিল, “মো মুণ্ডেরে চরড় দিবারে হউ।” কেহ কেহ বলিল, “টিকে ঠিয়া হৈকিরি ম দুঃখ শুনিবারে হউ।” সকলকে যথাসম্ভব উত্তরে প্রফুল্ল করিয়া সুন্দরীদ্বয় চলিল। চঞ্চলগামিনী ক্রকে একটু স্থির করিবার জন্য সন্ন্যাসিনী বলিল, “ধীরে যা গে বহিন ! একটু ধীরে যা । ছুটিলে কি অদৃষ্ট ছাড়াইয়া যাইতে পারিবি ?” স্নেহসম্বোধনে শ্রীর প্রাণ একটু জুড়াইল। দুই দিন সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে থাকিয়, স্ত্রী তাহাকে ভাল বাসিতে আরম্ভ করিয়াছিল। এ দুই দিন, মা ! বাছা ! বলিয়া কথা হইতেছিল,—কেন না, সন্ন্যাসিনী শ্রীর পূজনীয়। সন্ন্যাসিনী সে সম্বোধন ছাড়িয়া বহিন সম্বোধন করায় শ্ৰী বুঝিল যে, সেও ভালবাসিতে আরম্ভ করিয়াছে। শ্ৰী ধীরে চলিল । সন্ন্যাসিনী বলিতে লাগিল, “আর মা বাছা সম্বোধন তোমার সঙ্গে পোষায় না— আমাদের দুজনেরই সমান বয়স, আমরা দুই জনে ভগিনী।” শ্ৰী। তুমিও কি আমার মত দুঃখে সংসার ত্যাগ করিয়াছ ? সন্ন্যাসিনী। আমার সুখ দুঃখ নাই। তেমন অদৃষ্ট নয়। তোমার দুঃখের কথা শুনিব। সে এখনকার কথা নয়। তোমার নাম এখনও পর্য্যস্ত জিজ্ঞাসা করা হয় নাই— কি বলিয়া তোমায় ডাকিব ? শ্ৰী। অামার নাম ঐ ! তোমায় কি বলিয়া ডাকিব ? সন্ন্যাসিনী। আমার নাম জয়ন্তী। আমাকে তুমি নাম ধরিয়াই ডাকিও। এখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করি, স্বামী যাহা বলিলেন, তাহ শুনিলে ? এখন বোধ হয় তোমার আর ঘরে ফিরিবার ইচ্ছা নাই। দিন কাটাইবারও অন্ত উপায় নাই। দিন কাটাইবে কি প্রকারে, কখনও কি ভাবিয়াছ ? স্ত্রী। না। ভাবি নাই। কিন্তু এতদিন ত কাটিয়া গেল। জয়ন্তী। কিরূপে কাটিল ? শ্ৰী। বড় কষ্টে—পৃথিবীতে এমন ছঃখ বুঝি আর নাই। জয়ন্তী। ইহার এক উপায় আছে—আর কিছুতে মন দাও।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।