শ্রী। কিসে মন দিব?
জয়ন্তী। এত বড় জগৎ—কিছুই কি মন দিবার নাই?
শ্রী। পাপে?
জয়ন্তী। না। পুণ্যে।
শ্রী। স্ত্রীলোকের একমাত্র পুণ্য স্বামিসেবা। যখন তাই ছাড়িয়া আসিয়াছি—তখন আমার আবার পুণ্য কি আছে?
জয়ন্তী। স্বামীর এক জন স্বামী আছেন।
শ্রী। তিনি স্বামীর স্বামী—আমার নন। আমার স্বামীই আমার স্বামী—আর কেহ নহে।
জয়ন্তী। যিনি তোমার স্বামীর স্বামী, তিনি তোমারও স্বামী—কেন না, তিনি সকলের স্বামী।
শ্রী। আমি ঈশ্বরও জানি না—স্বামীই জানি।
জয়ন্তী। জানিবে? জানিলে এত দুঃখ থাকিবে না।
শ্রী। না। স্বামী ছাড়িয়া আমি ঈশ্বরও চাহি না। আমার স্বামীকে আমি ত্যাগ করিয়াছি বলিয়া আমার যে দুঃখ, আর ঈশ্বর পাইলে আমার যে সুখ, ইহার মধ্যে আমার স্বামিবিরহদুঃখই আমি ভালবাসি।
জয়ন্তী। যদি এত ভাল বাসিয়াছিলে—তবে ত্যাগ করিলে কেন?
শ্রী। আমার কোষ্ঠীর ফল শুনিলে না? কোষ্ঠীর ফল শুনিয়াছিলাম।
জয়ন্তী। এত ভাল বাসিয়াছিলে কিসে?
শ্রী তখন সংক্ষেপে আপনার পূর্ব্ববিবরণ সকল বলিল। শুনিয়া জয়ন্তীর চক্ষু একটু ছল ছল করিল। জয়ন্তী বলিল, “তোমার সঙ্গে তাঁর ত দেখা সাক্ষাৎ নাই বলিলেও হয়—এত ভাল বাসিলে কিসে? ”
শ্রী। তুমি ঈশ্বর ভাল বাস—কয় দিন ঈশ্বরের সঙ্গে তোমার দেখা সাক্ষাৎ হইয়াছে?
জয়ন্তী। আমি ঈশ্বরকে রাত্রি দিন মনে মনে ভাবি।
শ্রী। যে দিন বালিকা বয়সে তিনি আমায় ত্যাগ করিয়াছিলেন, সে দিন হইতে আমিও তাঁহাকে রাত্রি দিন ভাবিয়াছিলাম।
জয়ন্তী শুনিয়া রোমাঞ্চ কলেবর হইয়া উঠিল। শ্রী বলিতে লাগিল, “যদি একত্র ঘর সংসার করিতাম, তাহা হইলে বুঝি এমনটা ঘটিত না। মানুষ মাত্রেরই দোষ গুণ