সীতারাম هd রমার বুকের ভিতর টপ্ টপ্ করিতে লাগিল। রম তখন যাহাকে পাইল, তাহাকেই সেই কথা জিজ্ঞাসা করিল, পুরবাসিনী আবালবৃদ্ধ সকলকেই জিজ্ঞাসা করিল। সকলেই মুসলমানভয়ে ভীত, কেহই মুসলমানকে ভাল চক্ষুতে দেখে না—সকলেই প্রায় বর্ষীয়সীর মত উত্তর দিল। তখন রমা সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত মনে করিয়া, বিছানায় আসিয়া শুইয়া পড়িয়া, ছেলে কোলে লইয়া কাদিতে লাগিল। : তৃতীয় পরিচ্ছেদ এ দিকে তোরা খী সংবাদ পাইলেন যে, সীতারাম মহম্মদপুরে নাই, দিল্লী যাত্রা করিয়াছেন। তিনি ভাবিলেন, এই শুভ সময়, এই সময় মহম্মদপুর পোড়াইয়া ছারখার করাই ভাল। তখন তিনি সসৈন্তে মহম্মদপুর যাত্রা করিবার জন্য প্রস্তুত হইতে লাগিলেন। সে সংবাদও মহম্মদপুরে পৌছিল। নগরে একটা ভারি হুলস্থল পড়িয়া গেল। গৃহস্থেরা যে যেখানে পাইল, পলাইতে লাগিল। কেহ মাসীর বাড়ী, কেহ পিসীর বাড়ী, কেহ খুড়ার বাড়ী, কেহ মামার বাড়ী, কেহ শ্বশুরবাড়ী, কেহ জামাইবাড়ী, কেহ বেহাইবাড়ী, বোনাইবাড়ী, সপরিবার, ঘটি বাটি, সিন্দুক, পেটার, তক্তপোষ সমেত গিয়া দাখিল হইল। দোকানদার দোকান লইয়া পলাইতে লাগিল, মহাজন গোলা বেচিয়া পলাইতে লাগিল, আড়তদার আড়ত বেচিয়া পলাইল, শিল্পকর যন্ত্র তন্ত্র মাথায় করিয়া পলাইল। বড় হুলস্থল পড়িয়া গেল। - নগররক্ষক গঙ্গারাম দাস, চন্দ্রচূড়ের নিকট মন্ত্রণার জন্য আসিলেন। খলিলেন, “এখন ঠাকুর কি করিতে বলেন? সহর ত ভাঙ্গিয়া যায়।” চন্দ্রচূড় বলিলেন, “স্ত্রীলোক বালক বৃদ্ধ যে পলায় পলাক, নিষেধ করিও না। বরং তাহাতে প্রয়োজন আছে। ঈশ্বর না করুন, কিন্তু তোরাব, খ আসিয়া যদি গড় ঘেরাও করে, তবে গড়ে যত খাইবার লোক কম থাকে, ততই ভাল, তা হলে দুই মাস ছয় মাস । চালাইতে পারিব। কিন্তু যাহারা যুদ্ধ শিখিয়াছে, তাহাদের এক জনকেও যাইতে দিবে না, যে যাইবে, তাহাকে গুলি করিবার হুকুম দিবে। অস্ত্ৰ শস্ত্র একখানিও সহরের বাহিরে লইয়া যাইতে দিবে না। আর খাবার সামগ্রী এক মুঠাও বাহিরে লইয়া যাইতে দিবে না।”
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।