দ্বিতীয় খণ্ড—সপ্তম পরিচ্ছেদ (సి চলিয়া গেল। আবার মুরলা তাহাকে বাহির করিয়া দিয়া আসিল । গমনকালে মুরলা গঙ্গারামকে বলিল, “আবার আসিবে ?” গঙ্গা। কেন আসিব ? মুরলা বলিল, “আসিবে বোধ হইতেছে।” . গঙ্গারাম চোখ বুজিয়া পিছল পথে পা দিয়াছে—কিছু বলিল না। এ দিকে চন্দ্রচূড়ের কথায় তোরা খাঁ উত্তর পাঠাইলেন, “যদি অল্প স্বল্প টাকা দিলে মুলুক ছাড়িয়া দাও, তবে টাকা দিতে রাজি আছি। কিন্তু সীতারামকে ধরিয়া দিতে হইবে।” চন্দ্রচূড় উত্তর পাঠাইলেন, “সীতারামকে ধরাইয়া দিব, কিন্তু অল্প টাকায় হইবে না।” তোরাব খ। বলিয়া পাঠাইলেন, “কত টাকা চাও?” চন্দ্রচূড় একটা চড়া দর হাকিলেন ; তোরা খ একটা নরম দর দিয়া পাঠাইলেন। তার পর চন্দ্রচূড় কিছু নামিলেন, তোরা খ৷ তদুত্তরে কিছু উঠিলেন। চন্দ্রচূড় এইরূপে মুসলমানকে ভুলাইয়া । রাখিতে লাগিলেন । সপ্তম পরিচ্ছেদ কালামুখী মুরলা যা বলিল, তাই হইল। গঙ্গারাম আবার রমার কাছে গেল । তার কারণ, গঙ্গারাম না গিয়া আর থাকিতে পরিবে না। রম আর ডাকে নাই, কেবল মধ্যে মধ্যে মুরলাকে গঙ্গারামের কাছে সংবাদ লইতে পাঠাইত ; কিন্তু গঙ্গারাম মুরলার কাছে কোন কথাই বলিত না, বলিত, “তোমাদের বিশ্বাস করিয়া এ সকল গোপন কথা কি বলা যায় ? আমি একদিন নিজে গিয়া বলিয়া আসিব ।” কাজেই রম আবার গঙ্গারামকে ডাকিয়া পাঠাইল—মুসলমান কবে আসিবে, সে বিষয়ে খবর না জানিলে রমার প্রাণ বঁাচে না—যদি হঠাৎ একদিন পর বেলা খাওয়া দাওয়ার সময় আসিয়া পড়ে ? কাজেই গঙ্গারাম আবার আসিল । এবার গঙ্গারাম সাহস দিল না—বরং একটু ভয় দেখাইয়া গেল। যাহাতে আবার ডাক পড়ে, তার পথ করিয়া গেল। রমাকে আপনার প্রাণের কথা বলে, গঙ্গারামের সে সাহস হয় না—সরল রমা তার মনের সে কথা অণুমাত্র বুঝিতে পারে না। তা, প্রেমসম্ভাষণের ভরসায় গঙ্গারামের যাতায়াতের চেষ্টা নয়। গঙ্গারাম জানিত, সে পথ বন্ধ । তবু শুধু দেখিয়া, কেবল কথাবাৰ্ত্ত কহিয়াই এত আনন্দ ।
পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।