গঙ্গা। সে কি?
মুরলা। নহিলে তুমি অন্দর মহলে ঢুকিতে পাও?
গঙ্গা। কেন, আমি কি?
মুরলা। তুমি কি সেখানকার যোগ্য?
গঙ্গা। আমি তবে কোথাকার যোগ্য?
মু। এই ছেঁড়া আঁচলের। বাপের বাড়ী লইয়া যাইতে হয় ত আমাকে লইয়া চল। অনেক দিন বাপ মা দেখি নাই।
এই বলিয়া মুরলা হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। গঙ্গারাম বুঝিলেন, এ দিকে কোন ভরসা নাই। ভরসা নাই, এ কথা কি কখন মন বুঝে? যতক্ষণ পাপ করিবার শক্তি থাকে, ততক্ষণ যার মন পাপে রত হইয়াছে, তার ভরসা থাকে। “পৃথিবীতে যত পাপ থাকে, সব আমি করিব, তবু আমি রমাকে ছাড়িব না।” এই সঙ্কল্প করিয়া কৃতঘ্ন গঙ্গারাম, ভীষণমূর্ত্তি হইয়া আপনার গৃহে প্রত্যাগমন করিল। সেই রাত্রিতে ভাবিয়া ভাবিয়া গঙ্গারাম, রমা ও সীতারামের সর্ব্বনাশের উপায় চিন্তা করিল।
অষ্টম পরিচ্ছেদ
অনেক দিন পরে, শ্রী ও জয়ন্তী বিরূপাতীরে, ললিতগিরির উপত্যকায় আসিয়াছে। মহাপুরুষ আসিতে বলিয়াছিলেন, পাঠকের স্মরণ থাকিতে পারে। তাই, দুই জনে আসিয়া উপস্থিত।
মহাপুরুষ কেবল জয়ন্তীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন—শ্রীর সঙ্গে নহে। জয়ন্তী একা হস্তিগুম্ফামধ্যে প্রবেশ করিল,—শ্রী ততক্ষণে বিরূপাতীরে বেড়াইতে লাগিল। পরে, শিখরদেশে আরোহণ করিয়া, চন্দনবৃক্ষতলে উপবেশন করিয়া, নিম্নে ভূতলস্থ নদীতীরের এক তালবনের অপূর্ব্ব শোভা দর্শন করিতে লাগিল। পরে জয়ন্তী ফিরিয়া আসিল।
মহাপুরুষ কি আদেশ করিলেন, জয়ন্তীকে না জিজ্ঞাসা করিয়া, শ্রী বলিল, “কি মিষ্ট পাখীর শব্দ! কাণ ভরিয়া গেল!”
জয়ন্তী। স্বামীর কণ্ঠস্বরের তুল্য কি?
শ্রী। এই নদীর তরতর গদগদ শব্দের তুল্য।
জয়ন্তী। স্বামীর কণ্ঠস্বরের তুল্য কি?