পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একাদশ পরিচ্ছেদ সন্ধ্যার পর গুপ্তচর আসিয়া চন্দ্রচূড়কে সংবাদ দিল যে, ফৌজদারী সৈন্ত দক্ষিণ পথে মহম্মদপুর আক্রমণে আসিতেছে। - চন্দ্রচূড় তখন মৃন্ময় ও গঙ্গারামকে ডাকাইয়া, পরামর্শ করিতে লাগিলেন। পরামর্শ এই স্থির হইল যে, মৃন্ময় সৈন্য লইয়৷ সেই রাত্রিতে দক্ষিণ পথে যাত্রা করিবেন—যাহাতে যবনসেন নদী পার হইতে না পারে, এমন ব্যবস্থা করিবেন। এদিকে রণসজ্জার ধূম পড়িয়া গেল। মৃন্ময় পূৰ্ব্ব হইতেই প্রস্তুত ছিলেন, তিনি সৈন্য লইয়। রাত্রিতেই দক্ষিণ পথে যাত্রা করিলেন । গড় রক্ষার্থ অল্প মাত্র সিপাহী রাখিয় গেলেন। তাহারা গঙ্গারামের আজ্ঞাধীনে রহিল। এই সকল গোলমালের সময়ে পাঠকের কি গরিব রমাকে মনে পড়ে ? সকলের কাছে মুসলমানের সৈন্যাগমনবাৰ্ত্ত যেমন পৌছিল, রমার কাছেও সেইরূপ পৌছিল। মুরলা বলিল, “মহারাণী, এখন বাপের বাড়ী যাওয়ার উদ্যোগ কর।” রম বলিল, “মরিতে হয় এইখানেই মরিব । কলঙ্কের পথে যাইব না। কিন্তু তুমি একবার গঙ্গারামের কাছে যাও । আমি মরি, এইখানেই মরিব, কিন্তু আমার ছেলেকে রক্ষা করিতে তিনি স্বীকৃত আছেন, তাহা স্মরণ করিয়া দিও। সময়ে আসিয়া যেন রক্ষা করেন। আমার সঙ্গে কিছুতেই আর সাক্ষাৎ হইবে না, তাহাও বলিও।” রম মনস্থির করিবার জন্য নন্দার কাছে গিয়া বসিয়া রহিল। পুরীমধ্যে কেহই সে রাত্রিতে ঘুমাইল না। মুরলা আজ্ঞা পাইয় গঙ্গরামের কাছে চলিল। গঙ্গারাম নিশীথকালে গৃহমধ্যে একাকী বসিয়া গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। রত্ন আশায় সমুদ্রে ঝাপ দিতে তিনি প্রবৃত্ত— সাতার দিয়া আবার কুল পাইবেন কি ? গঙ্গারাম সাহসে ভর করিয়াও এ কথার কিছু মীমাংসা করিয়া উঠিতে পারিতেছিলেন না। যে ভাবিয়া চিন্তিয়া কিছু স্থির করিতে না পারে, তাহার শেষ ভরসা জগদীশ্বর। সে বলে, “জগদীশ্বর যা করেন।” কিন্তু গঙ্গারাম তাহাও বলিতে পারিতেছিলেন না—যে পাপকৰ্ম্মে প্রবৃত্ত, সে জানে যে, জগদীশ্বর তার বিরুদ্ধ—জগতের বন্ধু তাহার শত্রু । অতএব গঙ্গারাম বড় বিষণ্ণ হইয়। চিন্তামগ্ন ছিলেন। এমন সময়ে মুরলা আসিয়া দেখা দিল। রমার প্রেরিত সংবাদ তাহাকে বলিল । গঙ্গারাম বলিল, “বলেন ত এখন গিয়া ছেলে নিয়া আসি ।”