মুরলা। তাহা হইবে না। যখন মুসলমান পুরীতে প্রবেশ করিবে, আপনি তখন গিয়া রক্ষা করিবেন, ইহাই রাণীর অভিপ্রায়।
গঙ্গা। তখন কি হইবে, কে বলিতে পারে? যদি রক্ষার অভিপ্রায় থাকে, তবে এই বেলা বালকটিকে আমাকে দিন।
মুরলা। আমি তাহাকে লইয়া আসিব?
গঙ্গা। না। আমার অনেক কথা আছে।
মুরলা। আচ্ছা—পৌষ মাসে।
এই বলিয়া, মুরলা হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। কিন্তু গঙ্গারামের গৃহ হইতে বাহির হইয়া রাজপথে উঠিতে না উঠিতে মুরলার সে হাসি হঠাৎ নিবিয়া গেল—ভয়ে মুখ কালি হইয়া উঠিল। দেখিল, সম্মুখে রাজপথে, প্রভাতশুক্রতারাবৎ সমুজ্জ্বলা ত্রিশূলধারিণী যুগল-ভৈরবীমূর্ত্তি! মুরলা তাহাদিগকে শঙ্করীর অনুচারিণী ভাবিয়া ভূমিতে পড়িয়া প্রণাম করিয়া, যোড়হাত করিয়া দাঁড়াইল।
এক জন ভৈরবী বলিল, “তুই কে?”
মুরলা কাতরস্বরে বলিল, “আমি মুরলা।”
ভৈরবী। মুরলা কে?
মুরলা। আমি ছোট রাণীর দাসী।
ভৈরবী। নগরপালের ঘরে এত রাত্রিতে কি করিতে আসিয়াছিলি?
মুরলা। মহারাণী পাঠাইয়াছিলেন।
ভৈরবী। সম্মুখে এই দেবমন্দির দেখিতেছিস্?
মুরলা। আজ্ঞা হাঁ।
ভৈরবী। আমাদের সঙ্গে উহার উপরে আয়।
মুরলা। যে আজ্ঞা।
তখন দুই জনে, মুরলাকে দুই ত্রিশূলাগ্রমধ্যবর্ত্তিনী করিয়া মন্দিরমধ্যে লইয়া গেলেন।