পাতা:সীতারাম- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মা ! বোধ করিতেছি, আপনি এই নগরীর রাজলক্ষ্মী। দয়া করিয়া এ দাসকে ভৈরবীবেশে দর্শন দিয়াছেন। মা ! আপনি অপরিমানতেজস্বিনী হইয়া আপনার এই পুরী রক্ষা করুন । এই বলিয়া চন্দ্রচূড় কৃতাঞ্জলিপুটে ভক্তিভাবে জয়ন্তীকে প্রণাম করিলেন। “তবে, আমিই এই পুরী রক্ষা করিব।” এই বলিয়া জয়ন্তী প্রস্থান করিল। চন্দ্রচূড়ের মনে ভরসা হইল। জয়ন্তীরও আশার অতিরিক্ত ফললাভ হইয়াছিল। ঐ বাহিরে ছিল। তাহাকে সঙ্গে লইয়া জয়ন্তী গঙ্গারামের গৃহাভিমুখে চলিল। ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ মুরলা চলিয়া গেলে, গঙ্গারাম চারি দিকে আরও অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। যাহার জন্য তিনি এই বিপদসাগরে ঝাপ দিতেছেন, সে ত তাহার অনুরাগিণী নয়। তিনি চক্ষু বুজিয়া সমুদ্রমধ্যে বাপ দিতেছেন, সমুদ্রতলে রত্ন মিলিবে কি ? না, ডুবিয়া মরাই সার হইবে ? আঁধার । চারি দিকে আঁধার ! এখন কে তাকে উদ্ধার করিবে ? সহসা গঙ্গারামের শরীর রোমাঞ্চিত হইল। দেখিলেন, দ্বারদেশে প্রভাতনক্ষত্রোজ্জলরূপিণী ত্রিশূলধারিণী ভৈরবীমূৰ্ত্তি। অঙ্গপ্রভায় গৃহস্থিত প্রদীপের জ্যোতি মান হইয়৷ গেল। সাক্ষাৎ ভবানী ভূতলে অবতীর্ণ মনে করিয়া, গঙ্গারামও মুরলার ন্যায় প্রণত হইয়। যোড় হাত করিয়া দাড়াইল। বলিল, “ম, দাসের প্রতি কি আজ্ঞা ?” জয়ন্তী বলিল, “বাছা! তোমার কাছে কিছু ভিক্ষার জন্য আসিয়াছি।” ভৈরবীর কথা শুনিয়া, গঙ্গারাম বলিল, “মা ! আপনি যাহা চাহিবেন, তাহাই দিব। আজ্ঞা করুন।” জয়ন্তী। আমাকে এক গাড়ী গোলা বারুদ দাও । আর এক জন ভাল গোলন্দাজ দাও । গঙ্গারাম ইতস্ততঃ করিতে লাগিল—কে এ ? জিজ্ঞাসা করিল, “মা ! আপনি গোলা বারুদ লইয়া কি করিবেন ?” জয়ন্তী। দেবতার কাজ ।